লক্ষ্মীপুর: জেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিট লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ। ষাটের দশকে দেড়শ’ শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদানের সূচনা।
জ্ঞানতাপস, আলোর পথের পথিকৃত অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের হাত ধরে ১৯৬৪ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের যাত্রা শুরু। সে সময় ১৪ জন শিক্ষক এ কলেজের হাল ধরেন। সহযোগিতায় ছিলেন আটজন কর্মচারী। মাত্র কয়েক বছর পর কলেজটি স্নাতক শ্রেণিতে বিএ, বিকম এবং বিএসসি শাখার অনুমোদন পায়।
১৯৮০ সালে ১ মার্চ লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ জাতীয়করণ হয়। ১৯৯৫ সালে অনার্স কোর্স শুরু। ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত এ কলেজে ১১টি বিষয়ে অনার্সের পাঠদান চলছে। বিষয় গুলো হলো-রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, ইসলাম শিক্ষা, অর্থনীতি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত।
২০০৫ সাল থেকে মাস্টার্স। বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলাম শিক্ষা ও গণিতসহ আটটি বিষয়ে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনটি বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক ও তিনটি বিভাগে ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালু রয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ এ কলেজে শিক্ষক পদের সংখ্যা ৭১ জন। কর্মরত আছেন ৪৬ জন। সংকট রয়েছে ২৫ জনের। এমন পরিস্থিতিতে পাঠদান অনিয়মিত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে বাংলা বিভাগে একজন প্রভাষক। ইংরেজিতে দুইজন প্রভাষক। অর্থনীতিতে একজন সহকারী অধ্যাপক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যাপক ও তিনটি প্রভাষক পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগে দুইজন সহকারী অধ্যাপক, একজন প্রভাষক। সমাজকল্যাণ বিভাগে একজন প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস বিভাগে একজন, দর্শন বিভাগে একজন, পদার্থ বিজ্ঞানে দুইজন, রসায়ন বিজ্ঞানে দুইজন, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে একজন, প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগে দুইজন, হিসাব বিজ্ঞানে দুইজন, ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজন প্রভাষক পদ শূন্য রয়েছে। নেই শরীর চর্চার শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিক।
শিক্ষক সংকটের এ পরিস্থিতিতে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম চলছেনা। পাঠাদন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিদিষ্ট সিলেবাস শেষ করতে পারেনা। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।
পার্শ্ববর্তী জেলা ভোলা, চাঁদপুর নোয়াখালী ও ফেনী থেকে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে এসে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। কিন্তু শিক্ষক সংকট দূর করতে না পারলে শিক্ষার্থীরা এ কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ হারাবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৫-২০ দিন ক্লাস হয়েছে। বছরের বেশিরভগ সময়ে কলেজে পরীক্ষা থাকে। কলেজ খোলা থাকলেও শিক্ষকের অভাবে পাঠদান ঠিকমত হয় না।
বিবিএস (পাস) কোর্সের ছাত্র মো. আল-আমিন বলেন, শিক্ষক ও শ্রেণি কক্ষ সংকটে নিয়মিত ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক না থাকায় আমাদের পড়া-লেখা ঠিকমত হচ্ছে না।
অভিভাবকরা জানান, কলেজে শিক্ষক সংখ্যা কম। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। বেশিরভাগ শিক্ষক প্রাইভেট পড়াতে ব্যস্ত থাকে, এভাবে জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিট চলতে পারে না। তারা এখন সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। খুব শিগগিরই শিক্ষক সংকট দূর করে ক্লাস কার্যক্রম নিয়মিত করার আহ্বান তাদের।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান বাংলানিউজকে বলেন, কলেজের দীর্ঘ দিনের এ অবস্থার কারণে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ সোলায়মান শিক্ষক সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার জানানো হয়েছে।
স্বনামধন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য অটুট থাকবে। জ্ঞানের আলো বিস্তারে কোনো বাধা থাকবে না। প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্যে পৌঁছবে এ প্রত্যাশায় শিক্ষক, অভিভাবক, সচেতনমহল ও শিক্ষানুরাগীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
আরএ