ঢাকা: গাইড বা বই প্রকাশ ও সরবরাহ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে এমপিও বাতিল করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে শিক্ষা আইনের খসড়ায়।
প্রাক-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় এ বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আইনে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করবে।
আইনের দুই অধ্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক অংশের ৭ নম্বর এবং মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের ২১ নম্বর ধারায় নোট বই প্রকাশের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এ দুই ধারাতেই বলা হয়েছে, এনসিটিবিতে পাণ্ডুলিপির অনুমোদন নিলে কেবলমাত্র কোনো প্রকাশক, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সহায়ক শিক্ষা উপকরণ, সহায়ক পুস্তক ও ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবেন। কিন্তু কোনো ধরনের নোট বা গাইড বই প্রকাশ করা যাবে না।
শিক্ষা আইনের খসড়া অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। আর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত হবে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর।
আইনের দু’টি অধ্যায় ছাড়াও পঞ্চম অধ্যায়ে বিবিধ বিষয়াবলীর ৫৪ ধারায় ‘শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা’ অংশে বলা হয়, প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক যে কোনো স্তরের পর্যায়ে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা প্রকাশক গাইড বই ও নোট প্রণয়ন এবং প্রকাশ ও সরবরাহ করতে পারবে না।
তবে শর্ত থাকে যে, এনসিটিবি থেকে পাণ্ডুলিপির অনুমোদন নিয়ে কোনো প্রকাশক অতিরিক্ত হিসাবে সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বা পুস্তক প্রকাশ করতে পারবেন।
‘কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা ছয় মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ’
বিবিধ অংশের ৩ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়, সরকার প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
৪ নম্বর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, মুখস্থবিদ্যাকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে সব পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে নিতে হবে।
পঞ্চম অধ্যায়ের ৬১ নম্বর ধারাতেও (বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ স্থগিত, কর্তন, বাতিলসহ পুনঃপ্রদান বা চালুকরণ) কোচিং বাণিজ্য নিয়ে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়।
‘জ’ উপ-ধারায় বলা হয়, প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত প্রমাণিত হলে সরকার বা সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, মাদ্রাসা সুপার, প্রধান শিক্ষক অথবা শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ (এমপিও) এবং প্রতিষ্ঠানের এমপিও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাময়িক বন্ধ, অংশিক বা সম্পূর্ণ কর্তন কিংবা বাতিল করতে পারবে।
রাজধানীর নামি-দামি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রকাশকদের সঙ্গে যোগসাজশে নোট বা গাইড বই প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের পড়াতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে শিক্ষাবিদদের দাবি, নোট বই পড়ায় ক্লাসের পাঠ্যসূচি থেকে মৌলিক শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, আইনের খসড়ায় শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে।
‘শিক্ষা আইন-২০১৫’ নামে খসড়াটি এখন মতামত নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত খসড়ার বিষয়ে ই-মেইলে (info@moedu.gov.bd ও law_officer@moedu.gov.bd) মতামত দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৫
এমআইএইচ/এসএস