ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি থেকে কয়েক গুণ বেশি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সঙ্গে রয়েছে বাধ্যতামূলক কোচিং ফি।
অভিভাবকদের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি তারা শিগগিরই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার জন্য তড়িঘড়ি করে ১-৩ নভেম্বর মাত্র তিন দিন ফরম পূরণের সময় দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
অথচ বোর্ড নির্ধারিত অনলাইনে ফরম পূরণের সময় ১৯ নভেম্বর, আর ১০০ টাকা বিলম্ব ফি’সহ ২৫ নভেম্বর। এর আগে টেস্ট পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ ৫ নভেম্বর।
অভিভাবকদের অভিযোগ, বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের জন্য ২শ ৫০ টাকা কেন্দ্র ফি’সহ ১ হাজার ৩শ ২৫ টাকা লাগলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে ৬ হাজার টাকা। কোচিং নিষিদ্ধ থাকলেও কোচিং বাবদ প্রতি মাসে ৭শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে ৮ হাজার ৪শ টাকা।
এর বাইরে মাসিক বেতন ৪শ ৮০ টাকা করে ৫ হাজার ৭শ ৬০ টাকা, সেশন চার্জ ৪ হাজার টাকা (এককালীন) নেওয়া হচ্ছে।
একাধিক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, তড়িঘড়ি করে ফরম পূরণের তারিখ দিয়ে কোচিংয়ের ফি’সহ অতিরিক্ত অর্থ দিতে করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কোচিংয়ের জন্য এর আগে ছাত্রীদের লিখিত নেওয়া হয়েছিল।
অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির ব্যাপার। আমাদের কিছু করার নেই।
‘বিভিন্ন খাতে’ অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হলেও তা ব্যাখ্যা করতে পারেননি তিনি।
কোচিং নিষিদ্ধ থাকলেও কোচিংয়ের জন্য ৩ হাজার ৬শ টাকা নেওয়ার কথা জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, কোচিং না করালে ফল ভালো করতে পারে না। তাই কোচিং করার জন্য শিক্ষার্থীরাই লিখিত দিয়েছে।
কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোচিংয়ে বিজ্ঞান বিষয়গুলোর ক্লাস করানো হয়নি। এতে টেস্ট পরীক্ষায় অনেকে ফেল করেছে। আর ফেল করা বিষয়ের জন্য ৫শ টাকা দিলে পাস দেখানো হচ্ছে।
সহকারী প্রধান শিক্ষকের তথ্যানুযায়ী, মোট ৮৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞানে ১৫ জন, মানবিকে ১২ জন এবং বাণিজ্য বিভাগে এবার পরীক্ষা দেবে ৬০ জন ছাত্রী।
মাত্র ৮৭ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণে তড়িঘড়ি করে সময় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক কাজ আছে, তাই অল্প সময় দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে একজন অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, আমি একজন অল্প আয়ের অভিভাবক, তাই আমি এখনও স্কুলের নির্ধারিত বেতনের বাইরে কোনো ফি পরিশোধ করতে পারিনি। ফলশ্রুতিতে আমার বোনকে শ্রেণি শিক্ষকের কাছ থেকে নানা রকম কটূ কথা শুনতে হয়েছে।
তবে কটূ কথা শোনানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক।
অতিরিক্ত ফি’র জন্য অনেক শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করতে পারেনি বলে জানান অভিভাবকেরা।
এমপিওভুক্ত এ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সহকারী প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে কথা বলতে চাইলে তিনি ‘ব্যস্ত’ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি ও বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি তারা দ্রুত খোঁজ নিয়ে দেখছেন।
নিয়মানুযায়ী, তড়িঘড়ি করে ফরম পূরণের সময় দেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা নয়, বলেন বোর্ড চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
এমআইএইচ/এএ