ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এক কক্ষে পাঁচ শ্রেণির ক্লাস

রফিকুল আলম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫
এক কক্ষে পাঁচ শ্রেণির ক্লাস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ধুনট (বগুড়া): টিনের ঘর; দরজা-জানালা নেই। ঘরের চারদিকে নেই কোনো বেড়া বা দেয়াল।

মেঝেতে ছড়ানো-ছিটানো চেয়ার, বেঞ্চ ও টেবিল।  
 
এক পাশে ১৫/২০ জন শিশু শিক্ষার্থী বসা। অন্য পাশে যেখানে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা রাখার কথা, সেখানে আরাম আয়েশে শুয়ে আছে একটি ছাগল। পাশের চেয়ারে বসা প্রধান শিক্ষক তখন সুউচ্চ কণ্ঠে পড়াচ্ছিলেন, ‘পরিবেশ কাকে বলে’।
 
এটা কোনো নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের কাহিনী নয়। বগুড়ার ধুনট উপজেলার পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।  
 
স্থানীয়রা জানান, যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত জনপদে এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৭০ সালে। ১৯৯৬ সালে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে চার কক্ষ বিশিষ্ট একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। একই স্থানে ২০০৮ সালে ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বিদ্যালয়ের আরো একটি দ্বিতল ভবন।  
 
যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে ২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি পুকুরিয়া গ্রামটি বিলীন হয়। একই সঙ্গে যমুনা নদীতে নিশ্চিহ্ন হয় পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দুটি।  
 
এর এক মাস পর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে টিনের ছাপরা ঘর তৈরি করেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। সেখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো। ছয় মাস আগে এই টিনের ঘরটি তৈরি করা হয়। এরপর আর্থিক সঙ্কটে ঘরের বেড়া, দরজা কিংবা জানালা কিছুই তৈরি করা হয়নি।  
 
বিদ্যালয়ের টিনের এ ঘরটির চারদিকে উন্মুক্ত। খোলামেলা পরিবেশে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী। একটু বাতাসেই বাঁধের বালু উড়ে শিক্ষার্থীদের শরীরে লাগে। আর বর্ষাকালে প্রকৃতির নিয়মে পাঠদান দিতে হয়। বেড়াবিহীন ঘরের ভিতর বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শিক্ষা উপকরণ রাখেন প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ১ম শ্রেণিতে ১৫ জন, ২য় শ্রেণিতে ৭ জন, ৩য় শ্রেণিতে ১২ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৯ জন ও ৫ম শ্রেণিতে ৯ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সুবিধাভোগী।   
 
তিনি আরো বলেন, স্কুলে যত সংখ্যক শিক্ষার্থী আসে তার চেয়ে বিদ্যালয় গমন উপযোগী শিশুর সংখ্যা এ এলাকায় অনেক বেশি। কিন্তু অভিভাবকরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। দারিদ্র্যের কারণে তারা শিশুদের দিয়ে কাজ করাতেই বেশি আগ্রহী।
 
এমনিতে অভিভাবকরা অসচেতন ও অশিক্ষিত। কম সংখ্যক অভিভাবক স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন। তাই শিশুদের জন্য এ স্কুলই ভরসা। অথচ শিক্ষার্থীদের স্কুলের প্রতি আকৃষ্ট করতে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই।
 
ধুনট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা হওয়ায় ভাল মানের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ নেই। তারপরও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে শিক্ষা বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৫ 
এমজেড/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।