খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) পঞ্চম সমাবর্তনের সব প্রস্তুতিই প্রায় শেষ। সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে গোটা ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে।
রোববার (২২ নভেম্বর) দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে সমাবর্তনের সার্বিক বিষয় নিয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ২৫ নভেম্বর (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে এ সমাবর্তন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হওয়ার পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে চারটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ১৯৯৭ সালের ১০ এপ্রিল, দ্বিতীয় সমাবর্তন ২০০১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় সমাবর্তন ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ এবং ৪র্থ সমাবর্তন ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগের চারটি সমাবর্তনের চেয়ে এবারের সমাবর্তন হবে ব্যতিক্রম, যা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবে।
তিনি বলেন, পঞ্চম সমাবর্তন সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে স্টিয়ারিং কমিটি ও অর্গানাইজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া গঠন করা হয়েছে একাধিক উপ-কমিটিও। কমিটিগুলো স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করছে। ক্যাম্পাসের পুরাতন খেলার মাঠে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানটি হবে।
ভিসি জানান, ২৫ নভেম্বর সমাবর্তনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী রজতজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এছাড়া সদ্যনির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলটিও উদ্বোধন করবেন তিনি।
ভিসি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বতন্ত্র নজির সৃষ্টি করতে পেরেছে। সক্ষম হয়েছে সৃষ্ট ঐতিহ্য ধরে রাখতে। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বিবর্জিত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র হতে দেয়নি। গত ২৫ বছর এই সবুজ ক্যাম্পাসে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, রক্তের দাগ লাগেনি এর ইতিহাসে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণœ রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ নভেম্বর রজতজয়ন্তী উদযাপন করবে।
পঞ্চম সমাবর্তনের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ভিসি বলেন, সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমাবর্তন অনুষ্ঠান স্থলসহ গোটা ক্যাম্পাসকে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এই সিসি ক্যামেরা এখন থেকে স্থায়ীভাবে কাজ করবে।
কতোজন শিক্ষার্থী এবারের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সনদ নেবেন জানতে চাইলে মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে, তারাই এই সমাবর্তনে অভিজ্ঞান (সনদ) প্রাপ্ত হবেন। এর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। তবে তাদের মধ্যে আড়াই হাজার গ্রাজুয়েট সমাবর্তনে উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতির হাতে কাছ থেকে সনদ নেবেন বলে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এর মধ্যে ১৫ জনকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন আইটি (পিজিডিআইটি) ও একজনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের (অনুষদ) পরীক্ষার ফলাফলে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য এবার ১৪ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে।
সমাবর্তনের দিন রাষ্ট্রপতির কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাওয়া কি থাকবে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে পাঠ্যবিষয় নির্বাচনে বাস্তবতা, চাহিদা ও ভবিষ্যত সময়োপযোগিতার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সম্প্রসারণের সাথে সাথে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের দিকে। আর এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এর জন্য পঞ্চাশ একর জমি অধিগ্রহনের দাবি জানানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে পূর্বে পাঠানো দুইশ কোটি টাকা পাসের অনুরোধও জানানো হবে।
ভিসি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষার ইতিহাসে এক অনন্য অর্জন এবং দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত এ গৌরব সম্মিলিত প্রয়াস ও আন্তরিকতার ফসল। এটি কেবল ব্যতিক্রমধর্মীই নয়, দেশ ও জাতির কাছে খুবই প্রত্যাশিত এক অর্জন। মহান মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমিতে প্রতিষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এক অনন্য নজির।
সাক্ষাৎকারের সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন ভিসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৫
আরএইচ