ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে স্বাক্ষর আদায় বিদ্যালয় সভাপতির!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে স্বাক্ষর আদায় বিদ্যালয় সভাপতির!

রাজশাহী: রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আকবর আলীর বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নিয়োগ বোর্ডের কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুকতাদির আহম্মদ।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় গত ৯ এপ্রিল একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কয়েক জায়গায়ও এ অভিযোগ করেছেন মুকতাদির আহম্মদ।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রাধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তার অফিসে আসেন নিয়োগ বোর্ড গঠনের জন্য। কিন্তু তিনি সে সময় সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দেন যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারিখের পর শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষেধ আছে।

ওই ঘটনার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় পবা উপজেলার নির্বাহী অফিসার তাকে ফোনে বলেন যে, খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চান। তখন মুকতাদির নির্বাহী অফিসারকে ফোনে বলেন, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের পরে কোনো নিয়োগ দেওয়া যাবে না। সেই সময় নির্বাহী অফিসার তাকে ফোনে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ দেন।

নির্বাহী অফিসারের নির্দেশ পেয়ে মুকতাদির খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়োগ বোর্ড বন্ধের জন্য ফোন করেন। প্রধান শিক্ষক ওই সময় ফোনে জানান যে, তারা কোনো নিয়োগ বোর্ড করছেন না।

এ ঘটনার কয়েকদিন পরে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুকতাদির তাকে বিস্তারিত খুলে বলেন। সংসদ সদস্যও তাকে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ দেন।

কিন্তু ওই স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক তাকে অর্থ লোভ দেখিয়ে বলেন যে, ডিজি প্রতিনিধি, বোর্ড প্রতিনিধিসহ সব সদস্যের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। শুধু আপনার স্বাক্ষর বাকি। ওই দুই জন তাকে ব্যাক ডেটে নিয়োগ বোর্ডে স্বাক্ষর করতেও বলেন। কিন্তু বিষয়টি আইন পরিপন্থী বলে তা করেননি মুকতাদির।

এ ঘটনার পরে ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ওই স্কুলের সভাপতিসহ প্রধান শিক্ষক তাকে ফোন করে অবস্থান জানতে চান। এসময় তিনি তাদের বলেন, ঢাকায় ৬ এপ্রিল ‘মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সরকারি কাজে অংশ নিতে রেল স্টেশনে টিকিট কাটতে এসেছেন।

কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে তিনি বের হয়ে এসে দেখেন, স্টেশনে খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই আরও পাঁচটি মোটরসাইকেল এসে তাকে ঘিরে দাঁড়ায়। ও সময় বিদ্যালয় সভাপতি তাকে বলেন, আপনি ছাড়া সবাই রেজুলেশন ও ফলাফল সিটে স্বাক্ষর করেছেন। সভাপতি তাকে স্বাক্ষরের জন্য জোর করতে থাকেন।

বিষয়টি অবৈধ বলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানালে উপস্থিত সবাই মুকতাদিরের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা জোর করে মুকতাদির আহম্মদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেয়।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মুকতাদির আহম্মদ।

তবে এ নিয়ে খড়খড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আকবর আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

বাংদেশ সময়: ০৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
এসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।