ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ল্যাব সমস্যায় জবি শিক্ষার্থীরা, বাজেট নেই গবেষণায়!

জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৬
ল্যাব সমস্যায় জবি শিক্ষার্থীরা, বাজেট নেই গবেষণায়! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জবি: অবহেলার অন্য নাম যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়! কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর থেকেই অবহেলার শিকার এখানকার বিশ হাজার শিক্ষার্থী সঙ্গে শিক্ষকরাও।  

যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণার সূতিকাগার, সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ধুঁকছে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালে।

এখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যের অভাব রয়েছে।  

দেড় শতাধিক বছরের এ প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকটি বিভাগে ইতোমধ্যে এমফিল, পিএইচডির কার্যক্রম চালু হয়েছে কিন্তু গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়নি।
 
যেসব গবেষণার ব্যবস্থা এখানে নেই সেগুলোর জন্য শিক্ষার্থীদের যেতে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেটমিক এনার্জি সেন্টার, বুয়েট ও অন্যান্য রিসার্চ সেন্টারে।
 
জানা যায়, ইউজিসি থেকে প্রণীত বাজেটে গবেষণা নিয়ে বাজেট হয় খুবই অল্প, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয় ৬ লাখ টাকা, কিন্তু গবেষণা খাতে পাওয়া গেছে ৪ লাখ টাকা। যা দিয়ে গবেষণার উন্নয়ন সম্ভব নয়।  
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদার্থ বিজ্ঞানের এক শিক্ষক জানান, আমাদের এখানে গবেষণার জন্য ভাল কোন যন্ত্রপাতি নেই। ভাল একটি যন্ত্রের দাম ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ বা তার চেয়েও বেশি। আর আমাদের বাজেটই অনুমোদন হয় এক মেশিনের অর্ধেক তাহলে কিভাবে এর উন্নয়ন হবে?  
 
বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, নামমাত্র সুবিধা রয়েছে এখানকার ল্যাব গুলোতে, যা দিয়ে শুধু শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ধারণা দেওয়া ছাড়া গবেষণা অসম্ভব! পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে মোট ল্যাব রয়েছে ৫টি কিন্তু সবগুলোরই বেহাল দশা, নেই গবেষণার জন্য কোন দামি যন্ত্রপাতি, যেগুলো আছে সেগুলোও বেশিরভাগ নষ্ট।
 
রসায়ন বিভাগে কিছুদিন আগে নতুন একটি ল্যাব স্থাপন করা হলেও এটি এখনও কোমর তুলে দাঁড়াতে পারেনি। এখানেও অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির। নেই দেখাশোনার জন্য অভিজ্ঞ লোক। ৩য়, ৪র্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের ‘ফিজিক্যাল ইনগারনিক’ ও ব্যবহারিকের জন্য ‘স্পেক্টোফমিটার’ মেশিন নেই। যা কেনার প্রয়োজন থাকলেও প্রয়োজনীয় বাজেট বা অর্থ নেই।

প্রতি বছর বিভাগের নিজস্ব ফান্ড থেকে কিছু কমদামি যন্ত্রপাতি কেনা হয় এবং নষ্ট যন্ত্র মেরামত করা হয়। প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অবস্থা যেন সবগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। যে রুম দু’টিতে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে সেখানকার দেয়াল খোলস ছেড়ে বের হয়ে গেছে, ছাদ থেকে খসে খসে পড়ছে আস্তরণ, রুমের ফ্যানগুলো যেন আদিকালের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। ল্যাবের জানালাগুলোও ভাঙা যা দেখে একজন হেসে বললেন, প্রাণীবিদ্যার ল্যাব তো তাই পাখি আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে সরাসরি গবেষণা করতে পারেন!

এছাড়া ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান  বিভাগের ল্যাব এ কিছু পোড়ামাটি ও পাথর ছাড়া তেমন কিছুই দেখা যায়নি।
 
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. পরিমল বালা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব গবেষণা করতে পারছি না। আসলে গবেষণার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেগুলোর দাম অনেক, তাই আমরা চাই সব বিভাগের জন্য একটি সেন্ট্রাল গবেষণাগার তৈরি হোক। যা এখন খুবই প্রয়োজন।
 
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মল্লিক আকরাম হোসাইন বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুবিধা নেই, হল থাকলে আমাদের আরো বেশি বাজেট দিতে হত যেহেতু হল নেই সেহেতু ইউজিসির উচিত এই অর্থ দিয়ে আমাদের ল্যাবের উন্নয়নে আলাদা বাজেট দেওয়া।
 
ল্যাব সমস্যা সম্বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, ইতোমধ্যে আমরা ৩৭৫ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি যা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এই মেগা প্রকল্পে গবেষণা খাতের জন্য ২০ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের ল্যাব সমস্যা থাকবেনা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট০১, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।