ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দারিদ্র্যের অন্ধকার ঘরে আশার আলো জসিম-মহসিন!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৬
দারিদ্র্যের অন্ধকার ঘরে আশার আলো জসিম-মহসিন! ছবি: অনিক - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: আছে দারিদ্র্য। হাজারো সমস্যা এবং আর্থিক টানাপোড়েন।

কিন্তু এর কিছুই প্রভাব ফেলেনি জসিম ও মহসিনের মেধা বিকাশে। ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম আর অদম্য প্রচেষ্টায় ওদের ধরা দিয়েছে সাফল্য।

শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কৃতিত্ব অর্জন করেছে এ দুই শিক্ষার্থী। অবশ্য এর পেছনে রয়েছে তাদের বড় ভাই-বোনের অবদান।

ছোট ভাইকে পড়াশুনায় ভাল করতে হবে, আলোকিত মানুষ হতে হবে এমন বোধ থেকেই নিজেদের কাঁধে তাদের যাবতীয় ভার তুলে নিয়েছিলেন জসিমের বড় ভাই ওয়াসিম ও মহসিনের বড় বোন আরিফা রহমান।

দুই ভাই-বোনের কাছেই এখন জসিম ও মহসিন যেন হীরের টুকরো। সব অনটন জয় করেই ওরা উজ্জ্বল করেছে ওদের অভিভাবকদের মুখ।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফর প্রকাশের পর সবার সঙ্গে ওরাও মেতে ওঠেছিলো আনন্দ-উচ্ছ্বাসে।

কলেজটির মানবিক বিভাগে পড়ার দৌলতে জসিম ও মহসিন হয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জসিম ও মহসিনকে নিয়ে এখন তাদের পরিবার নতুন চিন্তায় দিন গুনছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় দুই বন্ধু। ফলে তাদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত তাদের পরিবার।

ওদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতেই সমাজের বিত্তশালী হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তা কামনা করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে জসিম উদ্দিনের বাড়ি। বাবা দরিদ্র কৃষক গিয়াস উদ্দিন। সংসারে ৩ ভাই, ২ বোন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৬৩ পেয়ে নগরীর এ কলেজটিতে ভর্তি হয়েছিলেন জসিম। থেকেছেন নগরীর সেনবাড়ি এলাকার একটি মেসে।

অভাবের সংসারে যেখানে নুন আন্তে পান্তা ফুরোয় সেখানে পরিবারের ছোট ছেলে জসিমের পড়াশুনা করানোর মতো সামর্থ্য ছিলো না বাবার।

কিন্তু ডিগ্রি পাস করা বড় ভাই ওয়াসিম মিয়া হাল ছাড়েননি। ছোট ভাইয়ের পড়াশুনার খরচ যোগাতে বেছে নিয়েছিলেন টিউশনি। আর মাঝে মধ্যে তার মামা তোতা মিয়াও ভাগ্নের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের শিক্ষকদেরও সহায়তা পেয়েছেন। জসিম বলেন, ‘কলেজ থেকে আমার কোনো বেতন নেয়নি। বাবা বৃদ্ধ, আমার পড়ালেখার খরচ যোগানোর মতো টাকা নেই তার।

কিন্তু বাবা-মা স্বপ্ন দেখতেন আমি উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করবো। আমি সেটি করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে অনেক টাকা দরকার।

কোচিংও করতে হবে। বড় ভাই আর মামা কতো দেখবে?’ হতাশার সুর বেজে ওঠে জসিমের কন্ঠে।

জসিমের সঙ্গে আলাপের সময়ই পাশে বসে মোবাইলফোনে নিজের বড় বোন আরিফা রহমানকে ফলাফলের সুসংবাদ জানাচ্ছিলেন মো. মহসিন। ‘আপু, ফাইভ পেয়েছি, তোমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে’ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছিলেন মহসিন।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কয়রা গ্রামের বাসিন্দা মহসিনের বাবা নেই। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে।

নগরীর কলেজ রোড এলাকার একটি মেসে থেকে পড়াশুনা করেছেন। বড় বোন আরিফা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী।

ছোট ভাই মহসিনের পড়াশুনাসহ যাবতীয় খরচ যোগাতে টিউশনি করেছেন তিনি। মহসিন বলেন, ‘আমার বাবা যে সম্পত্তি রেখে গেছেন তা ভোগদখল করছে এলাকার প্রভাবশালীরা।

ফলে বড় বোনের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকায় আমার পড়াশুনার খরচ চলছে। কলেজ থেকে উপ-বৃত্তি পেয়েছি। কোনো বেতন নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা বিনামূল্যে বই দিয়েছেন।

মা মঞ্জুরি বেগম ও বড় বোন আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। জীবনের মন্ত্র একটাই আমি বড় হবো’।

হতাশা নিয়ে মহসিন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই। বোনই আমার একমাত্র ভরসা। ভবিষ্যতে লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চলবে এ নিয়ে আমি চিন্তিত!

হৃদয়বান ব্যক্তিরা আমার পাশে না দাঁড়ালে হয়তো আর পড়াশুনাই হবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৬
এমএএএম/ওএইচ/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।