প্রথম দিনের ধর্মঘট ‌সফল দাবি জবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: হলের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচিতে ‘পুলিশের বাধা ও লাঠিচার্জের প্রতিবাদে’ ঘোষিত দু’দিনের ধর্মঘটের প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুরের এ কর্মসূচিকে সফল দাবি করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

তারা জানিয়েছেন, ঘোষণা অনুযায়ী দ্বিতীয় দিন বুধবারও (২৪ আগস্ট) ধর্মঘট চলবে।

মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন রাশেদুল ইসলাম। তিনি প্রথম দিনের ধর্মঘট শতভাগ সফল হয়েছে দাবি করে বলেন, আমরা টানা ২২ দিন যাবত আন্দোলন করে যাচ্ছি। আজকের আন্দোলন সফল হয়েছে। আজ ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। আমাদের এ কর্মসূচি আগামীকালও অব্যাহত থাকবে। তিনি দাবি করেন, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করা সত্ত্বেও আজকের আন্দোলনে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর বেআইনিভাবে ব্যারিকেড, হুমকি-ধামকি দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ডাকা হলেও শিক্ষার্থীদের বাইরে চলে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করছিলাম। রায়সাহেব বাজার মোড় অবরোধের কোনো প্ল্যান ছিলো না আমাদের। কিন্তু গতকাল রাতে আমাদের উপাচার্য এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ‘অদ্ভূত’ মন্তব্য করায় শিক্ষার্থীদের থামানো যায়নি। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে এসে অবস্থান নেয়।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে এ আন্দোলনে একাত্মতা ও সংহতি জানাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান রাশেদুল ইসলাম।

এর আগে, কর্মসূচি চলাকালে রুহুল আমিন নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রশাসন বা কোনো মন্ত্রীর আশ্বাস শুনতে চাই না, আমরা একমাত্র মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য শুনতে চাই।

তিনি বলেন, জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা জানে কীভাবে আন্দোলন করতে হয়। আমরা ২২ দিন যাবত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। প্রয়োজনে ২২ মাস রাজপথে থেকে হল নিয়ে আমরা ঘরে ফিরবো।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষকদের বাস থামিয়ে ধর্মঘট শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে, প্রধান ফটকের ‘অর্ধেক অংশ কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলায়’ সেটিতে তালা দিতে না পারলেও সবক’টি ভবনেরই ফটকে তালা লাগিয়ে দেন তারা। শিক্ষার্থীরা তালা লাগিয়ে দেন ভিসি ড. মীজানুর রহমানের কার্যালয় ভবনেও।

কিছুসময় ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করলেও সকাল ১০টার দিকে রায়সাহেব বাজার অতিক্রম করে নয়াবাজার মোড়ে যেতে চান শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর পরেই রায়সাহেব বাজার মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা আবার নয়াবাজার মোড়ের দিকে যেতে চাইলে ফের পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তাদের। তবে এবারও তাদের সামনে যেতে দেয়নি পুলিশ।

নতুন হল নির্মাণ ও নাজিমউদ্দিন রোডে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে (জবি) স্থায়ীভাবে লিজ দেওয়ার দাবিতে আগস্টের প্রথম থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে সোমবার (২২ আগস্ট) সকালে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বংশাল এলাকায় ‍তাদের ‘বাধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে’। তৎক্ষণাৎ শিক্ষার্থীরা নয়াবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ পালন করতে থাকেন। এরপর দুপুরে শিক্ষার্থীরা ২৩ ও ২৪ আগস্ট ধর্মঘট কর্মসূচি ডাকেন।

প্রতিষ্ঠার প্রায় ১১ বছর পার হলেও এই মুহূর্তে কোনো হল নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। এর আগে ২০০৯, ২০১১, ২০১৪ সালে হল নিয়ে জোরালো আন্দোলন হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আন্দোলনের সময় প্রশাসন কিছুটা দৌড়ঝাপ দেখালেও পরবর্তী সময়ে আর কোনো তৎপরতাই দেখা যায় না তাদের।

শিক্ষার্থীদের এবারের আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের। সমর্থন রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগেরও।