ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পানিবন্দী শিক্ষা জীবন

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পানিবন্দী শিক্ষা জীবন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: এক পাশে নেটে ঘেরা ধান ক্ষেত। আরেক পাশে কচুরি পানায় ভরা পুকুর আকৃতির ডোবা।

সেটিও নেটে ঘেরা। মাঝখানে থৈ থৈ করছে পানি। আর এটি হলো গ্রামের একটি চলাচলের পথ? এটা হেমন্তকালের চিত্র। বর্ষার চিত্রটা আরো ভয়াবহ।
 
এ পথ মাড়িয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় স্কুলে। হাটু পানিতে ভরা সেই পথ। দলবেধে সেই পানি মাড়িয়ে স্কুলের পথে একদল ক্ষুদে শিক্ষার্থী।
 
পরনের প্যান্ট মুড়িয়ে সবার হাটুর ওপরে ওঠানো। বইগুলো একেকজন একেকভাবে ধরে রেখেছে। কেউ মাথার ওপর উঠিয়েছে। কেউবা কাঁধে, আবার অনেকেই বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছে বইগুলো।
 
জামা-কাপড় ও বইকে পানি থেকে রক্ষা করতে তাদের দু’হাতই থাকে ব্যস্ত। অর্থাৎ এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অনেকটা পানিবন্দী।
 
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত বাদলাশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করার পথের দৃশ্যটা এরকম।
 
১৯১৪ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের চেষ্টায় এলাকার মানুষের দানের জমিতে প্রতিষ্ঠা করা আজকের এ প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে ১৫০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পাঠদান কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন ৫জন শিক্ষক। যারা সেই পানি পথ মাড়িয়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করেন।
 
ভাটগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর কাজেম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্কুলে চলাচলের জন্য কোনো রাস্তার ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে গ্রামের অলিগলি ও জমির আইল ধরে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় কোমলমতি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের।
 
শিক্ষকদেরও একই পথ ব্যবহার করতে হয়। বর্তমানে পানিতে নিমজ্জিত এ পথের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সবমিলিয়ে খুব দুর্ভোগে রয়েছেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
 
শাহনাজ, নুপুর, হাসান, জিহাদীসহ একাধিক ক্ষুদে শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলে, এভাবে হাটু পানি মাড়িয়ে আর কতদিন স্কুলে যাবো। অনেকের পায়ে ঘা হয়েছে। অথচ আমাদের খবর কেউ রাখে না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাস্তাটা বানিয়ে দিলেই তো পারেন।
 
কেননা তিনি ছাড়া কেউ রাস্তা বানিয়ে দেবেন না। আর রাস্তা হলে আমাদের বহুদিনের কষ্ট দূর হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের।  
 
বাদলাশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছি।
 
কিন্তু অদ্যবধি পর্যন্ত রাস্তা তৈরির জন্য কেউ এগিয়ে আসেন নি। ভবিষ্যতে কেউ এগিয়ে আসবেন কী-না সেটাও জানা নেই এ শিক্ষিকার।
 
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফুন্নেসা বাংলানিউজকে বলেন, প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এমবিএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।