ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জবির লাল বাসে গাঁজা-জুয়ার আসর!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
জবির লাল বাসে গাঁজা-জুয়ার আসর! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের দূর-দূরান্ত থেকে ক্যাম্পাসে আসার একমাত্র অবলম্বন বিআরটিসি থেকে ভাড়ায় চালানো ডাবলডেকার লাল বাস। এসব বাস শিক্ষার্থীদের সকালে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে, ক্লাস-পরীক্ষা শেষে বিকেলে আবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফিরে যায়।

এই আসা-যাওয়ার ফাঁকেই বাসগুলোতে চলছে গাঁজা ও জুয়ার আসর! বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুগদা, বাসাবো ও খিলগাঁও রুটে চলাচলকারী ‘প্রজন্ম’ বাসে ব্যাগ রাখতে গিয়ে এই গাঁজা ও জুয়ার আসর দেখা যায়।

বাসে চলাচলকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে ব্যাগ রেখে সিট ‘বুকিং’ করেন। বৃহস্পতিবার ঠিক সেসময়ে প্রজন্ম বাসে গেলে দেখা যায়, দোতলার সামনের অংশে বেশ কিছু লোক জটলা পাকিয়ে আড্ডা মারছেন এবং সেখান থেকে ভেসে আসছে গাঁজার উৎকট গন্ধ।

ব্যাপারটিতে সন্দেহ হওয়ায় পেছনের সিটে মিনিটখানেক বসলে ভেসে আসতে থাকে জুয়া খেলার বাক-বিতণ্ডা, “আমি পাইছি এবারের দান...মমিন এবারের দানে তোরে ফকির বানাইয়া দিলাম!”

কিছুক্ষণ পর সামনে এগিয়ে দেখা যায়, ১০-১২ জনের জটলাটিতে চলছে সিগারেটে গাঁজা সেবন এবং জুয়া খেলা। এসময় কাছে গিয়ে ছবি তুলতে চাইলে তারা বাধা দেন এবং বাস থেকে চলে যান। সেজন্য তাদের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

এ বিষয়ে প্রজন্ম বাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা অভিযোগ করেন, এসব বাসে নিত্যদিন বসে গাঁজা সেবন করেন বিশ্ববিদ্যালয় ও এর গেট সংলগ্ন এলাকার কিছু বখাটে। আর এসব বখাটেদের কাছে প্রায়ই ইভটিজিংয়ের স্বীকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পরিবহন পুলের কেউই খোঁজ নেন না বিধায় এবং বাস দেখাশোনার জন্য কোনো নিরাপত্তারক্ষী বা লোকজন না থাকায় এরকমটা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, বাসে জুয়া ও গাঁজা সেবনকারীদের সিংহভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ড্রাইভার, হেলপার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। এর পাশাপাশি বাস পার্কিংস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের বাইরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা লেগুনা স্ট্যান্ডের শ্রমিক, ড্রাইভার ও দোকানিরা রয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, বাস ক্যাম্পাসে পৌঁছার পর সব শিক্ষার্থী তাদের ক্লাসে চলে যান। আর এই সুযোগে পার্কিংস্থলে সবার পেছনে থাকা বাসগুলোতে এই চক্র জুয়ার আড্ডা বসায়। আর এতে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারদের সহযোগিতাও রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস ড্রাইভার বাংলানিউজকে বলেন, সকালে শিক্ষার্থীরা নেমে চলে যাওয়ার পরই সবার পেছনে রাখা ফাঁকা বাসে উঠে জুয়ার আসর বসান মধ্যবয়সী কিছু লোক। কেউ বাধা না দেওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে চক্রটির এই আড্ডা।

তবে এদের কাউকে চেনেন না বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে পরিবহন পুলের প্রশাসক ড. মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। আসলে এগুলো আমাদের নিজেদের বাস নয়। এগুলো বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা বাস, এখানে আমাদের কেউ নেই। তবে এই কাজে কেউ জড়িত আছে কিনা তা আমরা জেনে ব্যবস্থা নেবো।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে গাঁজা সেবন ও জুয়া খেলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আপনার কাছে যেহেতু প্রমাণের ছবি রয়েছে, নিউজ করেন। আমাদের হাতে শক্ত প্রমাণ আসুক, যারা এখানে এমন কাজ করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
ডিআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।