ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

কুপির আলোতে নতুন বই পড়ার প্রতিযোগিতা 

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
কুপির আলোতে নতুন বই পড়ার প্রতিযোগিতা  কুপির আলোতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা/ ছবি- মানজারুল ইসলাম

খুলনার বাটিয়াঘাটার হাটবাটি গ্রাম থেকে: মসজিদে কেবল মাগরিবের আজান শেষ হয়েছে। ঘরে ঘরে জ্বলে উঠেছে কুপির আলো। বুকের মধ্যে বই আগলে ধরে কুপির আলোর চারদিকে এসে বসে পড়েছে শিশুরা।

সকালে পাওয়া নতুন বইগুলো পড়ে শেষ করতে হবে যে। কে আগে বই পড়ে শেষ করতে পারবে চলবে তার প্রতিযোগিতা।

রোববার (০১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শোলমারী নদীর চরের ভূমিহীনদের ঘর ঘুরে দেখা গেছে, শিশুরা কুপি জ্বালিয়ে নতুন বই পড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছে। ঘরে ঘরে চলছে বই পড়ার প্রতিযোগিতা। দরিদ্র চর এলাকা হওয়ায় কয়েকটি ঘরের ছেলে মেয়ে কেরোসিনের সাশ্রয় করতে এক জায়গায় হয়ে বই পড়ছে। শিশুদের পড়ালেখা করতে দেখে অভিভাবকরাও বেশ আনন্দিত।

প্রথম শ্রেণির তাজমীম বলে, নতুন বইয়ে অনেক ছবি আছে। যা দেখতে ভালো লাগে।

বটিয়াঘাটা থানা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তানজীম বলে, ঝকঝকে চকচকে নতুন বই পেয়ে আমি আগেই কবিতা পড়ছি। তারপর অন্যগুলো পড়বো। কুপির আলোতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা
বটিয়াঘাটা হেডকোয়ার্টার পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মাকসুদা বলে, নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন বই পেয়েছি। বান্ধবীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছি তাদের আগে নতুন বইয়ে কবিতা পড়া শেষ করবো।

জলমা চক্রাখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ৮ম শ্রেণির অমিত শীল বলে, নতুন বই পেয়ে খুব ভালো লাগছে। নতুন বইয়ের মলাট-পাতায় পাতায় নতুনের ঘ্রাণ। এ ঘ্রাণ আমার খুব ভালো লাগে। আমি আজ বইয়ের গল্পগুলো পড়বো।
 
মারজিনা বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে তাজমিম প্রথম শ্রেণিতে নতুন বই পেয়েছে। সন্ধ্যার পরই মেয়ে বই নিয়ে পড়ে ঘর মাতিয়ে তুলেছে বলে তিনি খুশি।

শরীফা বেগম বলেন, বিনা টাহায় বই পেয়ে আমরা যেমন খুশি, ছওয়াল পাওয়ালও খুশি। এহত করেন্টডা হলি হয়। একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা

চরের বাসিন্দা কামরুল ঢালী বাংলানিউজকে বলেন, আমাগে এহানের ৩৫ ঘরের প্রায় ৫০ জন ছওয়াল (ছেলে) পাওয়াল (মেয়ে) নতুন বই পাইছে। তারা কুপি জেলে সন্ধ্যার পরই পড়তি বইয়ে। সরকার টাহা ছাড়া বই দেওয়ায় আমাগে ছওয়াল পাওয়াল লেহাপড়া করতি পারছে। এহানে যদি কারেন্ট থাকতো তালি ছওয়াল পাওয়াল আরও ভালো কইরে দেহে শুনে পড়তি পারতো।

তিনি জানান, তারা বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও বিদ্যুৎ পাননি।

ওদের মতো নতুন বছরে নতুন বই খুলনায় পেয়েছে ১৮ লাখ ৭ হাজার ১৬২ জন শিক্ষার্থী। বছরের শুরুতেই নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের হৃদয় নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা। নতুন বছর, নতুন ক্লাশ, নতুন বই, নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন, নতুন চেতনা। চারদিকে নতুনের ছড়াছড়ি।

ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর হাতে সরকার বছরের শুরুতেই বই তুলে দেওয়ায় আভিভাবকরাও সন্তুষ্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।