শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকালের নাস্তার তালিকায় থাকা পরোটা ও সবজির দাম মুছে ফেলা হয়েছে। আবারও সব সময় পরোটা-সবজি পাওয়াও যায় না।
অন্যদিকে, দুপুরের খাবারে সবজি খিচুড়ি ২০ টাকা। ভাজা ডিম বা এক টুকরা মুরগি খিচুরির দাম ৩৫ টাকা এবং তেহারির দাম ৪০ টাকা।
শুধু বেশি দামই নয়, খাবার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। কাঁকরযুক্ত চালের খুদ দিয়ে রান্না হয় খিচুড়ি ও তেহারি। আর নিম্নমানের ডালে থাকে দুর্গন্ধ যা খাবার হিসেবে গ্রহণ করা অসম্ভব! তারপরেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব খাবার হজম করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পানীয় হিসেবে পাওয়া যায় চা ও কোকাকোলা। ৯০ টাকা মূল্যের কোক এখানে বিক্রি হয় প্রায় ২০০ টাকা! আর চায়ের দাম (শিক্ষার্থীদের মতে, লাল গরম পানি) রাখা হয় ৩ টাকা।
খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে ক্যান্টিনের ইজারাদার/ ম্যানেজার আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ক্যান্টিনের দায়িত্ব নেই। এরপর যথাসম্ভব দাম কমিয়েছি, এর চেয়ে কম দামে বাইরে কোথাও কেউ খাবার দিতে পারবে কিনা তা আমার জানা নেই। অনেক সময় আমার স্টাফরা সময় মতো আসে না, তাই কোনো কোনো সময় সব আইটেম রাখা যায় না। ক্যান্টিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ভর্তুকি দেয় না। যদি এখানকার স্টাফদের দায়িত্ব বিশ্বববিদ্যালয় প্রসাসন নেয়, তাহলে হয়তো খাবারের মান কিছুটা ভালো বা দাম কমানো সম্ভব।
এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নিলুফার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য এই একটিমাত্র ক্যান্টিন মানা যায় না। এখানকার খাবারের মান অনেক খারাপ কিন্তু আমরা মেয়েদের একপ্রকার বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসের ভেতরে এখানেই খেতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান ক্যান্টিনের খাবারের মান খারাপ হওয়ায় শিক্ষকরা কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নতুন ভবনের নিচে 'টিচার্স ক্যান্টিন' স্থাপন করেছেন। মূলত শিক্ষকদের জন্য নির্মিত এই ক্যান্টিনে খাবারের দাম ক্যাম্পাসের বাইরের যেকোনো বাণিজ্যিক হোটেলের সমান কিংবা কিছু ক্ষেত্রে বেশিও।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কলা ভবনের সামনে 'রেভেনাস প্লাস' ও 'টিচার্স ক্যান্টিন' দুটি স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ব্যবসা করতে টেন্ডার আহ্বান করতে হয়। কিন্তু এ ক্যান্টিন দুটি প্রতিষ্ঠার সময় টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। এ ছাড়া ক্যান্টিন সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।
জবি ছাত্রকল্যাণের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি সবসময় চেষ্টা করি ক্যান্টিনে আমার শিক্ষার্থীরা কি খাচ্ছে, না খাচ্ছে তা জানার। আমি চেয়েছিলাম সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক একজন ইজারাদার যে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্যান্টিন খোলা রাখবে। যাতে করে রাত ৮ টায় লাইব্রেরি বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা এখানে খেয়েই বাসায় যেতে পারে। তবে এমন কাউকে না পাওয়ায় এভাবেই চালাতে হচ্ছে।
জবি উপাচার্য ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ক্যান্টিন চালানোর জন্য একটি পরিচালনা কমিটি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারেনি। কিছুদিনের মাঝেই নতুন কমিটি করে বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
এছাড়া ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ক্যান্টিনের চেয়ার বের করে আড্ডা দেওয়ার বিষয়টি তার নজরেও এসেছে বলে বাংলানিউজকে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৬
ডিআর/পিসি