আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার খাতা দেখতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেনো বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং খাতা দেখার জন্য সঠিক ও প্রয়োজনীয় সময় বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, সব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর পুর্নমূল্যায়নে শত শত পরীক্ষার্থী বেশি নম্বর পাচ্ছে। এদিকে ফেল করার কারণে অনেকে আত্মহত্যা করছে। পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য প্রয়োজনীয় সময় না দেওয়ায় ফলাফলের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর একটি দৈনিকে ‘পরীক্ষার খাতা দেখায় নৈরাজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ১ জানুয়ারি একটি রিট আবেদন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর প্রতিবছর সেই ফল পর্যালোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৪ সালে আট সাধারণ বোর্ডসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী।
গত বছর সে সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৩০১ জন। এ বছর আবেদন করেছিল এক লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ শিক্ষার্থী।
পুনর্নিরীক্ষার আবেদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফল রদবদলের হারও বেড়েছে। ২০১৫ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছিল দুই হাজার ৯১ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছে ৪০৪ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৪১ জন। বাকিদের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে।
এ বছর ১০ বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে চার হাজার ১৫২ জনের। এর মধ্যে অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছে এক হাজার ৮৫২ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮১১ জন। বাকিদের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষকদের অবহেলা ও অদক্ষতায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ ফল পাচ্ছে না। অনাকাঙ্ক্ষিত ফল বিপর্যয়ের শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু যাদের কারণে এই বিপর্যয়, দায়ী সেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। এতে অন্য পরীক্ষকরাও সতর্ক হচ্ছেন না। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে ভুলের হার। সম্প্রতি আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তদন্তেও পরীক্ষকদের ভুলের বিষয়টি উঠে এসেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের চলতি বছরের সর্বশেষ একাডেমিক সুপারভিশন রিপোর্টে দেখা যায়, সারা দেশের ৪৫ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে পারেন না। তবে শিক্ষক সমিতিগুলোর হিসাবে এ সংখ্যা অন্তত ৮০ শতাংশ। সম্প্রতি শেষ হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও (জেএসসি) গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শাস্তি হিসেবে প্রশ্ন প্রণয়নে জড়িত পাঁচ শিক্ষককে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।
একাডেমিক সুপারভিশন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বরিশাল অঞ্চলের ৯২ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না। ঢাকা বিভাগে এমন শিক্ষকের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫৫ শতাংশ, সিলেটে ৪৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫০ শতাংশ, রংপুরে ৪৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ২০ শতাংশ, খুলনায় ৩৯ শতাংশ ও কুমিল্লায় ৪৭ শতাংশ। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭/আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস