সেশনজটে পড়া ব্যাচগুলো হল ২০১২-১৩ সেশনের ১৯তম ব্যাচ, ২০১৩-১৪ সেশনের ২০তম ব্যাচ ও ২০১৪-১৫ সেশনের ২১তম ব্যাচ। এদের মধ্যে ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৪র্থ বর্ষ, ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৩য় বর্ষ আর ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২য় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেননি এখনো।
অন্য বিভাগের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে মাস্টার্স, ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৪র্থ বর্ষ ও ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত থাকত।
এর মধ্যেই কারণে অকারণে পেছানো হচ্ছে পরীক্ষা। ১৯ এপ্রিল হওয়ার কথা ছিলো ২০১১-১২ সেশনের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। অথচ মাত্র এক দিন আগে এই পরীক্ষা পেছানোর নোটিশ দেয়া হয়। নতুন রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ মে।
তবে তিন ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জটে পড়েছে ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। বারবার পরীক্ষা পরিবর্তন, দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল না দেয়া, ৩য় বর্ষের ভর্তির সুনির্দিষ্ট কোন তারিখ না দেয়া, প্রবেশপত্র হাতে না আসার কারণে এই সেশনজট দীর্ঘ হচ্ছে।
২১তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ঢাবিতে এখনো সেশনজট আছে তা অনেকে বিশ্বাস করতে চায় না। আমরা এখন নিজেদের পরিচয় দিতে সমস্যায় ভুগছি। আমাদের সিনিয়রদের ৩য় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা হয়নি। অন্যদিকে আমাদের জুনিয়ররা এখন দ্বিতীয় বর্ষে ক্লাস করছে। তাইলে আমরা কোন ইয়ারে পড়ি ?
এদিকে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়তে হলেও নিয়মতান্ত্রিক গতিতেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে সান্ধ্যকালীন কোর্স করা শিক্ষার্থীদের।
এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের। অথচ আমাদের বিভাগে সান্ধ্যকলীন কোর্স করা শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের অসুবিধা ছাড়াই ক্লাস পরীক্ষা হচ্ছে। আর আমাদের সেশনজটের গ্লানি পোহাতে হচ্ছে। সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাসে শিক্ষকেরা নিয়মিত থাকেন। অন্যদিকে আমাদের ক্লাসের সময়ে বিভিন্ন প্রজেক্টের ব্যস্ততা দেখান তারা।
বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, ২০ তম ব্যাচের ৩য় বর্ষে ভর্তির একটি নোটিশ সাঁটানো। যাতে ভর্তি শেষের সময় ও জরিমানাসহ ভর্তির কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া নেই। ওই স্থানে তারিখ ফাঁকা রেখে মাস এপ্রিল লেখা হয়েছে।
অন্যদিকে ২০তম ব্যাচের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০ এপ্রিল। কিন্তু ১৮ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষা ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নোটিশের মাধ্যমে পরীক্ষা তারিখ পেছানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০ তম ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০ তারিখ পরীক্ষা হবে ভেবে সেভাবে প্রস্তুতি নিই। কিন্তু হঠাৎ নোটিশের মাধ্যমে আমাদের আরো বেশি সেশনজটের দিকে ঠেলে দেয়া হলো।
আমরা ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হয়েও এখনো তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারলাম না, যেখানে আমাদের বন্ধুরা ৭ম সেমিস্টার পরীক্ষা দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের এই জট কাটিয়ে দেয়ার কথা বললেও এখন নতুন করে পরীক্ষা পেছানোর কারণে আরো বেশি সময়ের জন্য জটে পড়লাম।
জানতে চাইলে পরীক্ষা ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত একাডেমিক কমিটির। একদিনে একটা সেশনজট দূর করা সম্ভব নয়।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বাংলানিউজকে বলেন, ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফলাফল দিতে দেরি হওয়ায় পরীক্ষা পেছানা হয়েছে মাত্র সাতদিন। এখন ফলাফল জমা দেয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘ এক বছরেও ফলাফল দিতে না পারার কারণ তিনি স্পষ্ট করতে চাননি।
সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি কোন শিক্ষার্থী কোন শিক্ষকের বিষয়ে অভিযোগ দেয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ইনস্টিটিউট তো নিজেদের নিয়মে চলে। কি কারণে সেশন সৃষ্টি হয়েছে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
এসকেবি/আরআই