ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরিতে চাকরি প্রত্যাশীই বেশী

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরিতে চাকরি প্রত্যাশীই বেশী সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরিতে চাকরি প্রত্যাশীদের ভিড়। ছবি: ইকরাম -উদ দৌলা

ঢাকা: শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার বা কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারে পাঠকের ব্যাপক উপস্থিতির চিত্র নিত্যদিনের। তবে এসব পাঠকের মধ্যে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীই বেশি।

কেন্দ্রীয় এই গ্রন্থাগারের তিনটি অংশ। একটি শিশু কর্নার, অন্যটি সাধারণ কর্নার  আর অপরটি হচ্ছে বিজ্ঞান ও রেফারেন্স কর্নার।

শিশু কর্নারটি নিচ তলায়, সাধারণ কর্নার দ্বিতীয় তলায়, আর বিজ্ঞান ও রেফারেন্স কর্নার তৃতীয় তলায়।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাধারণ কর্নারে রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, দর্শন, ভাষা, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বড়বড় লেখকের বই রয়েছে। বিজ্ঞান ও রেফারেন্স সেকশনে রয়েছে দেশি-বিদেশি লেখকের বিজ্ঞান বিষয়ক বই। শিশু কর্নারে শিশু সাহিত্য থেকে শুরু করে শিশুদের জন্য লেখা বিভিন্ন ধরনের বই রাখা আছে।

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষ যে কোনো পাঠকের জন্য উন্মুক্ত। এখানে যে কেউ এসেই পড়তে পারেন। আর সে সুযোগটিই নিচ্ছেন চাকরি প্রত্যাশীরা।
 
সাধারণ কর্নারে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান কবীর খাতায় নোট নিচ্ছিলেন। বাংলানিউজকে বলেন, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এখানেই এসে সারাদিন পড়াশোনা করি।
 
সকাল ৮ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই লাইব্রেরির পাঠকক্ষ খোলা থাকে। ফলে নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীরা সকালেই লম্বা লাইনে করে ভেতরে প্রবেশ করেন। যাদের অনেকেই রাত পর্যন্ত এখানেই পড়াশোনা করেন। মূলত, তাদের চাপেই পাঠকক্ষ সব সময় প্রায় ভরা থাকে। এতে অনেক সময় গবেষক, সাহিত্য অনুরাগীদের জায়গা না পেয়ে ফেরতও যেতে হয়। আবু সালেহ আকন্দ নামে এমন এক পাঠক বলেন, এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করে তৃতীয়বার এসেও দেখি জায়গা নেই। তাই চলে যাচ্ছি।
 
এ বিষয়ে গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশিষ কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ২ লাখ ৬ হাজার ৯শ’ বই রয়েছে। ৯টি পত্রিকা ছাড়াও ২২টি দেশি-বিদেশি সাময়িকী রাখা হয়। অনেক দুষ্প্রাপ্য বইও আছে। তাই পাঠক সংখ্যা বেশি। এটা ঠিক, এদের মধ্যে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীই বেশি। সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরি।
 
একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) গ্রন্থাগারের পাশেই। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতেও অনেক ভিড় থাকে। তাই ঢাবি’র শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়তে আসেন। এছাড়া ঢাকার অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন। সকালে ওরা লাইন ধরে পাঠকক্ষে ঢোকেন। গ্রন্থাগারটি সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই যারা আগে আসছেন, তারাই বসে পড়তে পারছেন। সুযোগটি যার প্রয়োজন, সে কিন্তু নিচ্ছে।
 
এতে সাহিত্য অনুরাধী বা অন্য সাধারণ পাঠকের সুযোগ কমে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো গবেষক বা সাহিত্য অনুরাগী বা কোনো নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থী বা অন্য কোনো সাধারণ পাঠক, এভাবে আমরা বিবেচনা করছি না। সুযোগটা সবার জন্য রেখেছি।
 
কোনো নিয়োগ পরীক্ষার একজন প্রার্থী লাইন ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে পারলে একজন গবেষককেরও সেটা পারা উচিত। অনেকেই সেভাবেই আসছেন, পড়ছেন। এখানে যে আগে আসছেন তিনিই বসার জায়গা পাচ্ছেন। কেবল প্রবীণদের জন্য আলাদাভাবে বসার জায়গা করা হয়েছে। এছাড়া সকালে যারা আসেন, তাদের সবাই সারাদিন পড়েন না। সকাল ১০টার পর থেকেই কেউ কেউ বেরিয়ে যান, তাদের আসনগুলো আবার অন্যে এসে পূরণ করেন, এভাবেই চলে দিনভর পাঠচক্র।
 
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মোট আসন রয়েছে ৬২০টি। অধিকাংশই দখলে নেন নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীরা। ফলে প্রতিযোগিতা করে বসার জায়গা নিয়ে গবেষণার জন্য কোনো গবেষক বা সাহিত্য অনুরাগী আসতে চান না। তাই চাহিদার তাগিদে আসন সংখ্যা বা পাঠকক্ষ আরো বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন খোদ অধিদফতরের কর্মকর্তারাই।
 
এ বিষয়ে গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, নতুন একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় জাদুঘর, কেন্দ্রীয় এই লাইব্রেরি ও অধিদফতরের এই অঙ্গণকে আরো আধুনিকায়ন করা হবে। একটি বহুতল ভবনও তৈরি করা হবে। এতে লাইব্রেরির পাঠকক্ষের সংখ্যা ৫ থেকে অন্তত ১০ এ উন্নীত হয়ে যাবে। আর এই কাজটি আগামী জুলাই থেকেই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন ভবন হয়ে গেলে, আসন সংখ্যা অনেক বাড়বে।
 
এদিকে মহাপরিচালক আশিষ কুমার সরকার বলেন, শিক্ষার্থী, চাকরি প্রত্যাশী, সাহিত্য অনুরাগী, গবেষক এভাবে ক্যাটাগরি হিসেবে নিয়ে পাঠকক্ষ করার কোনো সুযোগ নেই। বইয়ের ধরন ভেদে পাঠকক্ষ বা কর্নার রয়েছে। আর তা সবার জন্যই উন্মুক্ত।
 
অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফাতেমা খাতুন বলেন, মার্চে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে এসেছেন ৮১ হাজার ১৩২ জন পাঠক। শিশু পাঠকও এসেছিল ৩ হাজার ৪৯ জন। এদের বেশি ভাগ নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থী হলেও অন্য পাঠকও কম নয়। রাতে যখন বই সেলফে তুলে সাজিয়ে রাখা হয়, তখন বোঝা যায় কত ধরনের পাঠক এখানে আসেন। কাজেই শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিজ্ঞানমনস্ক, গবেষক, সাহিত্য অনুরাগী, নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থী, পত্রিকা পাঠক; সব ধরনের পাঠকই সুযোগ পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।