বুধবার (১৭ মে) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বৃত্তিপ্রাপ্ত ৩৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুষ্ঠানে ১৬ শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যারা পিছিয়ে আছেন, আমাদের দিকে থেকে তাদের শিক্ষা-দীক্ষা এবং আর্থসামাজিকভাবে যেন তারা উন্নত হতে পারেন, সেই উদ্যোগটা আমরা হাতে নিয়েছি।
শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় ৫৫টি জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। তাদের জীবনমানটা কিভাবে উন্নত করা যায় এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কিছু বিশেষ এলাকা নিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। এজন্য বাজেটেও আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বৃত্তির অনুদান নিতে আসা শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরিধান করায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি একটি ভিন্ন মাত্রা লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী এজন্য ওই শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেক গোষ্ঠী আমাদের রয়ে গেছে, যেমন- সাওতাল, মুরং, হাজং, গারো, খাসিয়া বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আমাদের রয়ে গেছে। তাদের সংস্কৃতি শিক্ষা এবং মাতৃভাষার সম্মান বজায় রাখতে আমাদের একটা লক্ষ্য যে, এই বৈচিত্র্যময় যে নৃগোষ্ঠী রয়ে গেছে, তাদের ভাষার এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির যে চর্চা সেটা যেন সঠিকভাবে তারা করতে পারে। এদিকে লক্ষ্য রেখেই অনেকগুলো পদক্ষেপ আমরা এ পর্যন্ত নিয়েছি। যেমন- অনেক জায়গায় আমরা কালচারাল সেন্টার করে দিয়েছি।
বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানটিও সেজন্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় মনে করি শিক্ষা হচ্ছে একটি জাতির অধিকার। তারা শিক্ষার দিক থেকে যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্যও আমরা কাজ করছি। কারণ আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষায় শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি এবং ২১ বছর পর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে।
যাদের বর্ণমালা নেই তাদের বাংলাতেই লেখনি আয়ত্ব করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাত নিরসনে শান্তি চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই দশক ধরে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি ছিল তা আওয়ামী লীগ সরকার দূর করে সেখানে শান্তি চুক্তি করে। তাদের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় গড়ে তোলা হয়, পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদ করে দেওয়া হয় এবং বহুবিধ উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্দেশ্যেই সামরিক শাসনের রক্ষ চক্ষু উপেক্ষা করে আমি দেশে ফিরে আসি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। প্রকল্প পরিচালক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওরাং সম্প্রদায়ের লিমা তাত্তো বৃত্তি লাভের পর অনুষ্ঠানে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ সময় অনুষ্ঠানমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সরকারের কয়েকজন মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের সদস্য, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে বৃত্তি হিসেবে ২৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭/আপডেট ১৫৪৬ ঘণ্টা
এমইউএম/এইচএ/