ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবি'র ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অভাবী বাবার মেধাবী রুনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৭
ঢাবি'র ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অভাবী বাবার মেধাবী রুনা উত্তীর্ণ রুনা আক্তার

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ী এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামের চা-দোকানি নুর ইসলামের অভাবী সংসার। ছোট্ট চায়ের দোকানের উপর চলে ছয় সদস্যের পরিবার। কিন্তু অভাব-অনটন সর্বক্ষণ সঙ্গী। অভাবের সংসারে দুবেলা খাওয়াটাই এক বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সংসারে থেকে রীতিমতো লড়াই-সংগ্রাম করে পড়াশুনা চালিয়ে গেছে নুর ইসলামের মেয়ে রুনা আক্তার (১৮)।

পিতার চায়ের দোকানে কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে অভাবী সংসারের মেধাবী রুনা আক্তার আজ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

দরিদ্র চা-বিক্রেতা নুর ইসলামের পক্ষে রুনার পড়াশুনার খরচ বহন করা এক কথায় অসম্ভব।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুনার পড়াশোনা করাটা তাই অনিশ্চিত।

ঝাড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. মতিউল ইসলাম জানান, রুনা ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় অনেক ভালো। সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ পায়। পরে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ঝাড়বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি বছরই সে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলে। ঝাড়বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। মেধার স্বাক্ষর রাখে উচ্চ মাধ্যমিকেও। ঝাড়বাড়ী কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। মেধাবী ছাত্রী রুনার প্রতি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা সার্বক্ষণিক বিশেষ নজর রাখতেন। এছাড়াও তার মা রহিতন বেগম বাড়িতে তার পড়াশোনার ব্যাপারে যথাসাধ্য যত্ন নিতেন।  

রহিতন বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই রুনার কাছে পড়াশোনা ছিল এক প্রকার নেশা। রুনা চায়ের দোকানে পিতার কাজে সহায়তার হাত লাগাতো। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই পড়তে বসে যেতো। পড়াশোনার প্রতি মেয়ের এমন আগ্রহ দেখে বাড়ির সব কাজ দ্রুত শেষ করে চায়ের দোকানে গিয়ে আমি কাজে হাত লাগাই আর রুনাকে পড়ার সুযোগ করে দিই।  

রহিতন বেগম আরও বলেন, অভাবের কারণে রুনার পড়াশুনার খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। বই-খাতাসহ কিছুই দিতে পারতাম না। রুনাকে প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষক ও সহপাঠীরাই আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতে অংশ গ্রহণের সব খরচ যুগিয়েছেন ওর শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পেছনে শিক্ষক-সহপাঠিসহ স্থানীয় অনেকের অবদান রয়েছে। রুনা ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে খবর পেয়ে অনেকেই তাকে পড়াশোনা চালাতে সহায়তা যোগাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।  

বাংলানিউজের কাছে ঢাবি'র ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রুনা আক্তার তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছে, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার ব্যাপারে শিক্ষক ও সহপাঠীরা আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আজকে আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পেরেছি তাদের জন্যই। পিতা-মাতার অভাবের সংসারে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করেই আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে। তবে মা আমাকে সর্বক্ষণ সাহস যোগাতেন। মায়ের সাহস পেয়ে আমি আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। শিক্ষকরা সর্বক্ষণ নজরে রাখতেন। সহপাঠীরা সবাই খাতা-কলম ও বই দিয়ে সহযোগিতা করেছে। যারা আমাকে সহযোগিতা করে এসেছেন, আমার আজকের এই সফলতার কৃতিত্ব আসলে তাদেরই।

রুনা বলেন, ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসনিক কাজে দেশের সেবা করে যেতে চায় সে।  ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য রুনা সবার দোয়া চেয়েছে।  

উল্লেখ্য, রুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে খ বিভাগে মেধা তালিকায় স্থান পায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৭
জেএম/
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।