বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকদের গবেষণা ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোনিবেশ করার জন্য গতবছরে সপ্তাহে দুদিন ছুটি ও অফিস টাইম পরিবর্তন করে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত করা হয়। এ নিয়মে শিক্ষকদের ফুলটাইম শিক্ষাকর্মে ব্যয় করার কথা।
এই নীতিতে বিশ্বাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষক। কারণ তারা ঢাকায় বসবাস করেন। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিস সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে শিক্ষকদের জন্য ৪টি এসি বাস ক্যাম্পাস থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। চারটি বাসে প্রায় ১০০ থেকে ১২০জন শিক্ষক দুপুরে ঢাকায় চলে যান। তাছাড়া নিজস্ব গাড়িতে অনেক শিক্ষক দুপুরের আগেই চলে যান।
এদিকে একাধিক বাসচালক বাংলানিউজকে বলেছেন, সকালে ঢাকা থেকে ৬টি এসি বাস শিক্ষকদের নিয়ে আসে। ঢাকা থেকে বিশেষ করে মালিবাগ ও উত্তরা থেকে বাসগুলোর ক্যাম্পাসে আসতে ১০টা, ১১টা আবার কোনো কোনো দিন ১২টাও বেজে যায়। আবার দুপুরের বাসেই ওই শিক্ষকরা ঢাকায় চলে যান। এর মানে কোনো কোনো দিন তাদের যাওয়া আর আসাটাই হয়, গবেষণা বা শিক্ষাদান বলে কিছু করার সময় তাদের আর হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ৯ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির এক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় দুই দিন সকল একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানানো হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সন্ধ্যাকালীন কোর্স বৃদ্ধি পাবে ও নিয়মিত শিক্ষার্থীরা সেশনজটের মুখোমুখি হবে ---এমন আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা ফেসবুক বিরুপ প্রতিক্রিয়াও দেখান।
তা সত্বেও শিক্ষক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর অুনষ্ঠিত সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সময়সূচি পরিবর্তন ও সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার ছুটি নির্ধারণ করে দেয়।
অফিস সময় পরিবর্তন করার ফলে ঢাকা-ক্যাম্পাস আর ক্যাম্পাস-ঢাকা যাতায়াতের গাড়ির সময়সূচি পরে জানানো হবে বলে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আজ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকদের বাসের সময়সূচির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
সপ্তাহে দুদিন ছুটি ও অফিসটাইম পরিবর্তন করে সুফল কি হয়েছে? তাতে কি একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বেড়েছে? বেড়েছে কি গবেষণাকর্ম? নাকি কমেছে সেজনজট, নাকি উল্টো ক্রমশ বেড়েই চলেছে সন্ধ্যাকালীন কোর্সের নামে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষাবাণিজ্য। এ ধরনের নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কারো কাছেই কোনো সদুত্তর নেই এসব প্রশ্নের।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে কমপক্ষে ৬মাস থেকে ১ বছরের সেশনজট রয়েছে। আগে ৫-৬টি বিভাগে সন্ধ্যাকালীন কোর্স চালু থাকলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-১২টি বিভাগে। এছাড়া সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার যেসব বিভাগে সন্ধ্যাকালীন কোর্স চালু রয়েছে এই দুদিন ওই বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে কোনো তাড়া অনুভব করতে দেখা যায়নি। সকালে ক্যাম্পাসে এসে রাতে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিয়ে থাকেন। এছাড়া অন্যসব কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন। ক্লাশে সময় দিয়ে পড়ানোর গরজ তাদের নেই।
এমন অনেক সিনিয়র শিক্ষক আছেন, যারা সপ্তাহে ১ থেকে ২দিন মাত্র ক্যাম্পাসে পা রাখেন। তবে বেতন ওঠানোর দিন ঠিকই হুড়াহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এমনটাই জানালেন রেজিস্ট্রার অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম গোলাপ নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, ‘ঢাকা থেকে ন'টায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক বাস এসে পৌঁছানোর কথা.......! যাহোক, একটা বাজতেই তারা বাসে করে রাজধানীতে ফিরে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা ! কোনো ফুলটাইম জব এমন আছে কি কোথাও?
শিক্ষক সমিতি সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমদ বলেন, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা। সেখানে এ বিষয়ে সকলের মত নিয়ে ‘কি করা যায়’, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, আমাদের বিবেক হারিয়ে গেছে। এখন আইন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা ছাড়া অন্য কোনো পথ আর খোলা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি সহযোগিতা করলেই কেবল এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘন্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এনএএইচ/ জেএম