শুধু ফুলার রোড নয়, এমন চিত্র ক্যাম্পাসের অন্যান্য সড়কেও। বাইক ছাড়াও ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে বহিরাগতদের আনাগোনা।
অন্যদিকে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপও স্পষ্ট নয়। মাঝেমাঝে নামকাওয়াস্তে কিছু পদক্ষেপ নিলেও তা ভেস্তে যায় বাইকারদের বেপরোয়া আচরণ ও দৌরাত্ম্যের কাছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় সাফল্য দেখাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। নামেই বোঝা যায়, এটা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলনকেন্দ্র। একাডেমিক বিষয়ের বাইরে যেখানে চলে সহ-শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম। কিন্তু সেই টিএসসিতে বহিরাগতদের অনিয়ন্ত্রিত চাপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় বহিরাগতদের নানা বিশৃঙ্খল, অন্যায় আচরণ ভাবিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
বহিরাগতদের এমনসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। বিভিন্ন সময় টিএসসি থেকে বেশ কয়েকজন বহিরাগতকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে থানায় পর্যন্ত সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবুও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বহিরাগতদেরে। এছাড়া আছে হৈ-হট্টগোল ও মারামারির ঘটনাও।
কলা অনুষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাজমুল বাংলানিউজকে বলেন, টিএসসি রীতিমতো এখন মাছের বাজারে পরিণত হয়েছে। বিকাল বেলা বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয় না। একবার তো ইলিশ মাছ বিক্রি করতে দেখলাম।
এছাড়াও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সড়কে বহিরাগত যানবাহন চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে নিত্যদিনই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির আরেক নাম এখন যানজট। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নীলক্ষেত মোড় থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত যানজট এখন নিয়মিত দৃশ্য। আর বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টিএসসির মোড় যেন হয়ে ওঠে গুলিস্তান মোড়।
নিয়মিত যানজট ও বহিরাগতদের সার্বক্ষণিক আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় এখন ছিনতাইকারীদেরও টার্গেটে পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট। বাইকে করে এসে ব্যাগ, ল্যাপটপসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা। পাশেই নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি। কিন্তু তা কেবল নামেই আছে। সব অপকর্মই হচ্ছে ফাঁড়ি-পুলিশের নাকের ডগায়। এছাড়াও রাত্রিবেলা এতো বেশি ভারী যানবাহন চলাচল করে যে, শিক্ষার্থীদের শান্তিতে পড়ার বা ঘুমানোর উপায় আর নেই।
সম্প্রতি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় উপাচার্যের পুত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর, মহসীন হলের মাঠে বহিরাগত অনেককে ড্রাইভিং শিখতেও দেখা যায়। এজন্য অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করে না এরা।
বিশ্ববিদ্যায়ের বটতলা, ক্যাম্পাস শ্যাডো, আমতলায় সন্ধ্যার পরে বহিরাগতদের অবস্থান শিক্ষার্থীদের বিব্রতকর অবস্থার মুখে ফেলে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদও করেন। কিন্তু বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর ব্যবস্থা কেউ নেয় না।
নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নাসরিন সুলতানা পপি বাংলানিউজকে বলেন, বহিরাগতদের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা এখন সময়ের দাবি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তারা ক্যাম্পাসে আসবে, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে একটা নির্দিষ্ট সময়ে বহিরাগত প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, বহিরাগতদের বিষয়ে আমরা কঠোরতা অবলম্বন করবো। ক্যাম্পাসে ছিনতাই বেড়েছে। শাহবাগ থানার সাথে কথা বলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বহিরাগতদের সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ক্যাম্পাসে ছিনতাই প্রতিরোধ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রবেশপথে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হতে পারে। ফুলার রোডে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন>>
** ঢাবিতে বাড়ছে ভবন, কমছে সবুজ
** নাক চেপে হাঁটতে হয় ঢাবির রাস্তায়
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এসকেবি/জেএম