জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরিচালিত হবে বিদ্যালয়টির পড়াশোনা। তবে, শিশুর জন্য শিক্ষাকে সত্যিকার অর্থে আনন্দদায়ক করে তুলতে সহ-শিক্ষা কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যালয়কে ‘শিশুর আনন্দ আশ্রম’ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ‘বাতিঘর’।
২০১৮ শিক্ষাবর্ষকে সামনে রেখে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। বিদ্যালয়টির যাত্রা উপলক্ষে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘বাতিঘর বিদ্যালয় পরিচিতি’ ও ‘শিশুশিক্ষায় আনন্দ’ শিরোনামে একটি মুক্ত-আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় অংশ নেন- শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, কিশোর আলো সম্পাদক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আনিসুল হক, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক ড. তপন বাগচী, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক জাহিদ নেওয়াজ খান, বাতিঘর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ও শিশুসাহিত্যিক তুষার আবদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক, শিশুশিক্ষা গবেষক শ্যামলী আকবর, ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল-এর হেড অব আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গার্লস এডুকেশন প্রোগ্রাম, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের পরিচালক তামান্না সেতু, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মেহেদী হাসান শোয়েব-সহ শিশুশিক্ষার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিত্ব ও বাতিঘর বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মীরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাতিঘর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোরশেদ শফিউল হাসান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শিশুদের শিক্ষা হওয়া উচিত চাপমুক্ত পরিবেশে। তাদের স্কুলে পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকা দরকার।
শিশু সাহিত্যিক আখতার হুসেন জার্মানির শিক্ষা ব্যবস্থার উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমাদের শিশুদের যে বিষয়গুলো পড়ানো হয় তার সাথে ওদের বাস্তব পরিচয় ঘটাতে পারলে পড়ানোর ফল অনেক বেশি পাওয়া যায়।
অধ্যাপক শ্যামলী আকবর শিশুদের জন্য প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলেন, ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকা উচিৎ না। শিশুদের ক্লাস রুমের ভেতরে বন্দি না করে তাদেরকে খোলা চত্বরে নিতে হবে।
বাতিঘর বিদ্যালয়ের উপদেষ্টা তপন বাগচী প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গ এনে বলেন, প্রশ্ন ফাঁস তো ৫ম শ্রেণির শিশুরা করে না। করে তার অভিভাবকরা। অর্থাৎ অভিভাবকদের মানসিকতা বদলাতে হবে।
বাতিঘর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, আনন্দের সাথে শিশুশিক্ষা মানেই শুধুমাত্র গান কবিতা করানো না। শিশুরা অনেক বেশি চায় খেলতে। তাদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে।
বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের পরিচালক তামান্না সেতু জানান, বাতিঘর বিদ্যালয়ে শিশুদের কোনো পরীক্ষার চাপ থাকবে না। শিশুরা এখানে নানারকম খেলা, গান, অভিনয়-সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে। মনের আনন্দে গাইতে গাইতে বা খেলতে খেলতে শিখবে, পড়বে, জানবে। চারুকলা ক্লাসে ছবি আঁকার পাশাপাশি মৃৎশিল্পের ক্লাস করবে বাতিঘর বিদ্যালয়ের শিশুরা। শিশুদের এই আনন্দময় শিক্ষা পরিচালনার জন্য বাতিঘরের শিক্ষকদেরকের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণের।
তিনি বলেন, স্কুল যেনো কোনোভাবেই শিশুর শৈশব কেড়ে না নেয় সেদিকে বাতিঘর বিদ্যালয়ের বিশেষ নজর থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাতিঘর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থী না, পরীক্ষার্থী তৈরি করছে। এ রকম অবস্থায় শিশুশিক্ষাকে আনন্দদায়ক করা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। বাতিঘরের মতো প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কারিক্যুলাম মেনেই শিশুদের জন্য শিক্ষাকে কতোটা আনন্দদায়কভাবে উপস্থাপন করা যায় সেদিকে মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এমজেএফ