ঢাকা, বুধবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩১, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সেই সাজাপ্রাপ্ত কর্মচারী আবারও ভর্তি কার্যক্রমে! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
সেই সাজাপ্রাপ্ত কর্মচারী আবারও ভর্তি কার্যক্রমে!  লোগো

বেরোবি (রংপুর): বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৪-১৫ স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করানো ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কর্মচারী আবুল কালাম আজাদকে ফের ভর্তি পরীক্ষায় সম্পৃক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন!   

ফলে রোববার (২৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শাস্তিপ্রাপ্ত ওই কর্মচারী বর্তমানে উপাচার্যের একান্ত সহকারী (পিএ) হওয়ায় আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে দাবি করে এর তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষক প্রতিনিধিরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় তৎকালীন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সেমিনার সহকারী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে আর্থিক সুবিধা নেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিলো। ওই বছরের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার এক স্বজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূরন্নবী ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম সিন্ডিকেট সভায় ওই কর্মচারীর পাঁচ বছরের জন্য আপগ্রেডেশন/প্রমোশন বন্ধসহ ইনক্রিমেন্ট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বাংলানিউজকে জানান, ওই স্বজনকে কার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে- জানতে চাইলে তিনিও আবুল কালাম আজাদের নামই প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
অভিযোগপত্রঅভিযোগ রয়েছে, ওই কর্মচারী আগের উপাচার্য অধ্যাপক নূরন্নবীর ৪ বছরের মেয়াদ শেষে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি বিশেষ মহলের মাধ্যমে তাকে ম্যানেজ করে উপাচার্যের পিএ’র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদটি হাতিয়ে নেন।

বর্তমানে তিনি দাপটের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বছরের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা রোববার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই উপাচার্যের পিএ হিসেবে ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন ওরিয়েন্টেশন কোর্সসহ ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে তাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন শিক্ষক জানান, পিএ হিসেবে আবুল কালাম আজাদ সব সময় উপাচার্যের সঙ্গে থাকেন। আর উপাচার্য নিজেই সামাজিক বিজ্ঞান, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। ফলে ওই অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির পর তার কাছে থাকার কথা। কিন্তু সব ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিন্ডিকেট। সেই শাস্তি চলমান থাকা অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা প্রবল।
 
সরকার সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সভাপতি আপেল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, উপাচার্যের উচিৎ- সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো। এমন প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে ভর্তি পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট করা সিন্ডিকেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। তিনি যদি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত না মানেন, তাহলে কে মানবেন? 

অভিযুক্ত ব্যক্তি কিভাবে উপাচার্যের পিএ হিসেবে নিয়োগ পান- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাকে সেখান থেকে না সরালে আরও বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘যাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তার শাস্তি চলাকালে এ ধরনের কাজে জড়িত করা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলবে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব)  ড. ফরিদ উল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি উপাচার্যকে জানাবো। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
ওএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।