ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ইবি’র ৩ বিভাগে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত মুন্নার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
ইবি’র ৩ বিভাগে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত মুন্নার

ইবি: চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০১৭-১৮) একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন মো. মুন্না আলী। অর্থাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না তিনি।

মুন্না ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ গ্রামের বর্গাচাষি আব্দুল মালেকের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ষাটোর্ধ্ব বয়সে তার বাবার চাষাবাদ করাটাও দায় হয়ে গেছে।

তাই বাধ্য হয়ে ক্লাসে যাওয়া বাদ দিয়ে মুন্নার অধিকাংশ সময় কাটে অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে। এছাড়া উপজেলার স্কুল, কলেজে মানবিক বিভাগের সেরা ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও দরিদ্রতার প্রতিবন্ধকতায় আটকে থাকতে হয় তার। শেষ পর্যন্ত সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও ভর্তি হওয়ার টাকা নেই তার। তিনি এখন তাকিয়ে আছেন সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের দিকে।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে মুন্না সবার ছোট। দিনের অধিকাংশ সময় টিউশনি আর পিতার সঙ্গে চাষাবাদ করেও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৮৩ পান মুন্না। গৌরব অর্জন করেন মানবিক বিভাগে উপজেলা থেকে সেরা শিক্ষার্থী হওয়ার। সেই সুবাদে পেয়ে যান বৃত্তিও। এসএসসির সেই ধারা অব্যাহত থাকে এইচএসসিতেও। এবার পেয়ে যান জিপিএ-৫। আবারও উপজেলা থেকে সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচিত হন তিনি।

কিন্তু উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। নিজের বৃত্তি ও টিউশনির টাকায় এতদিন পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন মুন্না। এছাড়াও কখনো টিউশনি আর বৃত্তির টাকা দিয়ে পরিবারকেও চালাতে হতো তার।

মুন্না এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বি’ ইউনিটে নৃ-বিজ্ঞান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে 'এ' ইউনিটে ইংরেজি এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এইচ’ ইউনিটে আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ‘বি’ ইউনিটে ইংরেজি এবং 'সি' ইউনিটে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ অর্জন করেছেন

ইতোমধ্যে অর্থাভাবে জবিতে ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া করে মুখ মলিন হয়ে গেছে মেধাবীছাত্র মুন্নার।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ অর্জন করলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন চালু করা আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনাতে পড়াতেই তার একান্ত ইচ্ছা। তাছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ববর্তী বছরে ভর্তি ফি তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে থাকায় আগে থেকেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন মুন্না।

কিন্তু এ বছর ভর্তি হতে প্রায় ১২ হাজার টাকা লাগবে তিনি জেনেছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা ও খরচ জোগানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি হতে না পারলে হয়তো তার স্বপ্ন স্বপনই থেকে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছাকাছি এসেও ফিরে যেতে হবে তাকে। তাই তিনি তাকিয়ে আছেন সমাজের বিবেকবানদের দিকে। একটু সহানুভূতিই তাকে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন সফল করে দিতে পারে।

মুন্নার বাবা আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, অন্যের জমি চাষ করে সংসার চালাই। তাছাড়া বয়স হয়ে গেছে চাষাবাদটাও আগের মতো পারিনা। মেয়েটাও মেধাবী থাকা সত্ত্বেও অভাবের সংসারে খুব বেশি লেখাপড়া করাতে পারিনি। এসএসসি পাশ করার পরই বিয়ে দিয়ে দেই। আর ছেলে দুটো অনাহারে-অর্ধাহারে লেখাপড়া করছে। সকাল বেলা মাঠে কাজ এবং বিকেলে টিউশনি করে মুন্না লেখাপড়া করেছে।

তিনি আরো বলেন, অনেকেরই তো ধন-সম্পদ আছে কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সই পায় না। আমার মুন্না তো তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। এখন মুন্নাকে ভর্তি করার মতো অর্থ হাতে নেই। ঘরে থাকা ধান বিক্রি করে ও ধার-দেনা করে পাঁচ হাজার টাকা যোগাড় করেছি। এখন শুনলাম ভর্তি হতে আরো সাত হাজার টাকা লাগবে।

তিনি বলেন, মুন্নাকে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি সহযোগিতার হাত বাড়ান তাহলে ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।