ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

দুই কোচিংয়ে তালা, আবেদন করবে বাকি ৪টি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
দুই কোচিংয়ে তালা, আবেদন করবে বাকি ৪টি  তালা লাগানো ইউনিএইড কোচিং সেন্টার/ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ব্যানার-পোস্টারে অবৈধ ও অননুমোদিত প্রচারণার দায়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল হওয়া রাজধানীর ছয় কোচিং সেন্টারের দু’টিই তালাবদ্ধ। বাকি চারটির সংশ্লিষ্টরা লাইসেন্স ফিরে পাওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করবেন। তাদের দাবি, যে অভিযোগের ভিত্তিতে লাইসেন্স বাতিল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণগুলো অনেক আগের।

সাইনবোর্ড, পোস্টার, ফেস্টুন, ওভারহেড সাইনবোর্ড অপসারণ না করায় ছয়টি কোচিং সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করে গত ২৫ অক্টোবর চিঠি ইস্যু করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।  

ফার্মগেটের ইউসিসি, ইউনিএইড, আইকন, আইকন প্লাস, ওমেকা ও প্যারাগন কোচিং সেন্টারের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়টি জানাজানি হয় মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর)।

ডিএনসিসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।

ফার্মগেটের পাশে গ্রিনরোড এলাকায় বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে কোচিং সেন্টারগুলোর অফিসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। দেখা যায়, আগে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে যে নানান রঙের ব্যানার-পোস্টার সাঁটানো ছিল তা এখন নেই। কৌশলেই সেগুলো নামিয়ে ফেলেছেন তারা।
 
ইউসিসি, আইকন প্লাস, ওমেকা ও প্যারাগন কোচিং সেন্টারের অফিস খোলা পাওয়া যায়। আর ইউনিএইড এবং আইকন কোচিং সেন্টারের অফিস ছিল বন্ধ।
 
৩৩ বছরে ইউসিসির ব্যবসায় বড় আঘাত!
চেয়ারম্যান এমএ হালিম পাটোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেই প্রাইভেট-টিউশনি করতেন। পরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন ‘কোচিং ব্যবসা’! ‘সেই ব্যবসা’ এখন সারা দেশে। গ্রিনরোডের নিজস্ব এএইচপিএফ টাওয়ারে পরিচালিত হচ্ছে ইউসিসির প্রধান শাখা। ঢাকার মোট ১২টি এবং ঢাকার বাইরের আরো ৭১টি শাখা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

লাইসেন্স বাতিল করায় বিপাকে পড়েছেন এই কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায় বড় ধরনের আঘাতের পাশাপাশি স্টাফরাও পড়েছেন বিপাকে। তেমনটাই বলছিলেন মূল শাখার স্টাফরা।
 
ইউসিসি গ্রুপের মনিটরিং অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। পরিদর্শনের সময় পুরনো ছবি দেখানো হয়েছে। তিলে তিলে বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে ইউসিসি। বিভিন্ন স্থানে দু’একটি পোস্টার থাকতে পারে। আমাদের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল তার জবাব দিয়েছি।
ইউসিসি গ্রুপের মনিটরিং অফিসার তরিকুল ইসলাম 
তিনি বলেন, ৩৩ বছরের প্রতিষ্ঠানে আমাদের মূল শাখাতেই অর্ধশত স্টাফ। এতো পুরনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, এটা মানা যায় না।
 
তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দিকনির্দেশনা দিয়ে ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতা করে কোচিং সেন্টারগুলো। একইভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগও হয়েছে। হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া মানে একটা বিপদে পড়া।
সিটি করপোরশনের কাছে লাইসেন্স ফিরে পেতে আবারও আবেদন করা হবে বলে জানান তরিকুল ইসলাম।

ক্ষিপ্ত আইকন প্লাসের পরিচালক
৪৮ গ্রিনরোডে ভাড়া ভবনে পরিচালিত হচ্ছে আইকন প্লাস। ২০১২ সালে আইকন নামে পরিচালিত হলেও নিজেদের দ্বন্দ্বে ভাগ হয় ২০১৪ সালে। ‘আইকন প্লাস’ নাম দিয়ে নতুন আরেকটি কোচিং পরিচালনা করছেন তারা। নিচতলায় প্রবেশ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে উত্তেজিত হয়ে যান পরিচালক কামাল উদ্দিন। ছবি তুলতেও বাধা দেন। বলেন, আপনারা সাংবাদিকরাই দায়ী।

পরে শান্ত হয়ে বিনয়ের সুরে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন পরিচালক কামাল। বলেন, আমাদের নামে যে অভিযোগ তা পুরনো। এখন কোনো পোস্টার নেই। পাশেই মোবাইল শো রুম, একটি হোটেল বিল্ডিং জোড়া ব্যানার দিয়ে রেখেছে। এগুলোতে কি সৌন্দর্য বাড়ছে? দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কোর্টে যাবো।

কথা বলার সময় সেখানে অভিভাবক হারুন অর রশিদ টাঙ্গাইল থেকে এসেছেন মেয়েকে ভর্তির জন্য। ঢাকার মাইলস্টোন থেকে পাস করা মেয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, গতবছর মেডিকেল কোচিং করেছিল, চান্স হয়নি। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোচিং করাবো।
 
বিপদে পড়ে যাবো...
গ্রিনরোডে ১৩১/বি ঠিকানায় তিনতলায় উঠে দেখা গেলো বসে আছেন দুই স্টাফ। সাংবাদিক পরিচয়ে নিজেদের আসন্ন দুর্গতি তুলে ধরলেন নাজমুল কাজী ও তানজীল হাসান।

হাসান বলেন, বন্ধ হলে আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে। বিপদে পড়ে যাবো। যখন অভিযোগ এসেছে আমরা দেয়াল লিখন মুছে ফেলেছি, এখন দেখেন ছোট সাইনবোর্ড।
 
সিটি করপোরেশন নির্দেশনা দেওয়ার পর আর পরিদর্শন না করেই লাইসেন্স বাতিল করেছে বলে অভিযোগ করেন নাজমুল।
 
তারা জানান, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে কোচিংয়ের পরিচালকরা তাদের নিয়ে কক্সবাজার গেছে। সেখান থেকে এলে জানা যাবে পরবর্তী পদক্ষেপ।
 
শহরে কোনো পোস্টার নেই!
পোস্টার-ব্যানারে শহরে সৌন্দর্য বিনষ্ট হলেও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ওমেকা কোচিং সেন্টারের স্টাফ তিতুমীরের দাবি, শহরের কোথাও আমাদের পোস্টার নেই। কয়েকটি লিফলেট আকৃতির কাগজ দেখিয়ে তিনি বলেন, এগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তির তথ্য থাকে। সেগুলো রাস্তায়ও ফেলে না শিক্ষার্থীরা।
 
মার্কেটিং অফিসার শহীদ বলেন, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। তারা ঢাকা শহরে এসে কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে টিকে থ‍াকে। অনেকেই পড়ালেখা শেষ করেও এই পেশায় যুক্ত। যদি লাইসেন্স বাতিল হয় তাহলে এদের কী হবে? কোচিং সেন্টার বন্ধ হলে আমরা স্টাফরাও বিপদে পড়বো। যে অভিযোগে ধরা হয়েছে সেই দোষ সবারই আছে। ধরা হলে সবাইকে ধরা হোক।   

বন্ধ আইকন কোচিং সেন্টার 
ইউনিএইড-আইকনের ফটকে তালা
গ্রিনরোডের ১৩১/বি ঠিকানায় দ্বিতীয় তলায় আইকনের অফিস। গিয়ে দেখা যায় দুই সাটারেই তালা মারা। ওই ভবনে ব্যক্তিগত কাজে আসা একজন ব্যক্তি জানান, এটা প্রায়ই বন্ধ থাকে। এই রোডের ১০৬/এ ভবনের চারতলায় উঠে দেখা গেললো ইউনিএইডের অফিসেও তালা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এমআইএইচ/এসআইজে/এএ

*** ইউসিসি-ওমেগাসহ ৬ কোচিং সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।