ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‌প্রশ্নফাঁসের নেতিবাচক প্রভাব পড়লো ফলে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৮
‌প্রশ্নফাঁসের নেতিবাচক প্রভাব পড়লো ফলে! রেজাল্ট দেখছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিলো। পরীক্ষার আগেই ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনে ছড়িয়ে যায় প্রশ্নপত্র। পাওয়া যায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণও। এতে ফলাফলে পাস ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসার ধারণা করা হলেও হয়েছে উল্টো।

প্রশ্নফাঁস এবং পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের ফলে এবার পাসের হারে নেতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

রোববার (০৬ মে) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার পাসের শতকরা হার ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, গত বছর ছিলো ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

অর্থা‍ৎ পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

পাসের হার কমার পেছনে প্রশ্নফাঁসের প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম।

তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস তো হয়েছে। কিছু প্রভাব তো পড়বেই। প্রশ্নফাঁসে অনেকে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু পাসের হার কমেছে। প্রশ্নফাঁসে শতকরা ১০ শতাংশ প্রভাব থাকবে।

তবে প্রশ্নফাঁস হলেও সৃজনশীল অংশ যারা বোঝে না তাদের পাস করা কঠিন বলেও মনে করেন অধ্যক্ষ শাহান আরা।

এবারের প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে দেখা যায়, এবছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন, গত বছর ছিলো ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ৫ হাজার ৮৬৮ জন।

অধ্যক্ষ বেগম বলেন, জিপিএ-৫ বাড়লেও পাসের হার কমাটা উদ্বেগজনক। মেধাবীরা প্রশ্নফাঁসে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।

তবে প্রকাশিত ফলাফলকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফল এরকমই হয়। যে মানের পড়াশোনা হয়, যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়, এই ফল অস্বাভাবিক না।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মুখস্ত নির্ভর হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চিন্তা করে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। গাইড বই-নোট বই এমনভাবে পুরো শ্রেণিকক্ষে দখল করে রেখেছে যে এর বাইরে যেতে চায় না। আর কোচিং বাণিজ্যতো রয়েছে। ফল এমনই হওয়ার কথা।

‘যারা পাস করেছে তাদের কতজন নিজের থেকে চিন্তা করে লিখতে পারে- সেটা নিয়ে ভাবতে হবে’, মনে করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

ফাঁস প্রশ্নে যারা পাস করছে তাদের ভবিষ্যৎ বেশি উজ্জ্বল হয় না বলে মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস বা নকল করে যারা পাস করে তারা কখনও ভালো করে না। ভালো শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব পড়ে না। পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী প্রশ্ন পেয়ে থাকলে প্রভাবটা কম। পরবর্তীতে তারা ধরা পড়ে যাবে। দেখা যাবে এবার যারা ধরা পড়েছে তারা বেশি দূর এগোতে পারবে না। আমার মনে হয় না এটা (প্রশ্নফাঁস) বড় একটা সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে। ‍

তবে শিক্ষকরা যারা প্রশ্নফাঁসে জড়িত তাদের চাকরি থেকে বাদ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

এবার শূন্য ভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৯টি, গত বছর ছিলো ৯৩টি। এ প্রসঙ্গে মনজুরুল ইসলাম বলেন, কোন স্কুলে বেশি পাস, কোন স্কুলে শূন্য। শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাস্তি না দিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে বসতে হবে। কারণ আমাদের মেধার কোন কমতি নেই, পরিচর্যা না করলে বিকাশ ঘটে না।

এবার সারাদেশে একই প্রশ্নপত্র দিয়ে এসএসসির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে এক জায়গায় প্রশ্নফাঁস হলে তা ছড়িয়ে গেছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য কাজী ফারুক আহমেদ প্রচলিত পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতিকে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছে অকার্যকর হয়ে গেছে বলে মনে করেন।

তিনি বলেন, পরীক্ষা দিয়ে মেধা যাচাইয়ের পক্ষে আমি না। পাবলিক পরীক্ষা বিশ্বমানের সঙ্গে সমকক্ষ না করলে পিছিয়ে পড়বে। পরীক্ষা পদ্ধতি বদলাতে শিক্ষাবিদদের নিয়ে টাস্কফোর্স করতে হবে, তারা নির্ধারণ করবেন কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। তবে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টির এমসিকিউ অংশের ‘খ’ সেট প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রশ্নফাঁসে পরীক্ষার ফলে তেমন প্রভাব পড়েনি। আমাদের পরীক্ষার্থী অনেক আগেই পরীক্ষার হলে ঢুকে গেছে, ফলে তাদের উপর প্রভাব পড়েনি। তবে এটা থেকে বের হতে বলিষ্টভাবে দেখবো এবং এটা থেকে হয়ে আসার চেষ্টা করবো।

এবার পাস কম হওয়ার পেছনে পরীক্ষা পদ্ধতির মূল্যায়নে পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, শিক্ষকরা ভালো মতো খাতা না দেখে যেন নম্বর না দিয়ে যান, এগুলো প্রমাণিত। অনেক দিন ধরে গবেষণা করে এই জায়গায় আসতে হয়েছে। গতবারও পাসের হার কমেছে, এবারও কমেছে। তার মানে ওইসব (মূল্যায়ন) জায়গাগুলোতে জোর দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বিইডিইউ) কয়েক বছর গবেষণা করে পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে নতুন কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছেন পরীক্ষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।