গত এক-দেড় বছর ধরে কুবির একাধিক শিক্ষার্থী ব্লাড ক্যান্সার, কিডনি অকার্যকারিতার, লিভার জটিলতাসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য মরণঘাতী ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অর্থাভাবে রোগের সঙ্গে লড়াই করে হেরে যাচ্ছে।
এছাড়া বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রলয় দাস ও মেহেদী হাসান নামে দুই শিক্ষার্থী। সম্প্রতি আরেকজন শিক্ষার্থীর মাঝে দেখা দিয়েছে মরণঘাতী ব্লাড ক্যান্সার।
এসব রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র এসব শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের ব্যয়ভার গোঁছাতে মাঠে নেমে ফান্ড সংগ্রহ করে অন্যান্য সহপাঠীরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তা আর হয়ে উঠে না। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কল্যাণ তহবিল থাকলে তার থেকে শিক্ষার্থীরা খুব দ্রুত সহায়তার সুযোগ থাকতো বলে মনে করে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
ফান্ড গঠনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি অবশ্যই একটি ভালো ও সময় উপযোগী উদ্যোগ। এটা নিয়ে প্রস্তাব আসলে তা অবশ্যই আমরা গুরুত্ব দিব। ’
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরণের ফান্ড থাকে। যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নতুন তাই এখনো এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবার এ ফান্ড গঠন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যদি ফান্ডের জন্য টাকা নেওয়া হয় তখন শিক্ষার্থীরা বাড়তি ফি নিচ্ছে বলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। আবার অনেক শিক্ষার্থী আছে সেমিস্টার ফি দিতেও কষ্ট হয়ে যায়। তবে যেহেতু বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে সেহেতু উপাচার্য স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। ’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনএম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ‘বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলথ ইন্সুরেন্স থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরে থাক রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ ধরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনা করে এ ধরণের একটি ফান্ড প্রবর্তন করা যায়। যেটা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় সহায়তা করবে। অথবা ভর্তির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়ে কোনো ইন্সুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্ন শর্তে চুক্তিবদ্ধ হওয়া যেতে পারে। ‘
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্যাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ধরণের একটি ফান্ড গঠন করা যায়। তবে সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কিংবা তারা বিষয়টি কিভাবে নিবে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ সবার অংশগ্রহণও প্রয়োজন। ’
ক্যান্সার থেকে বেঁচে ফেরা শিক্ষার্থী তন্ময় বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ধরণের একটি ফান্ড গঠন খুবই জরুরি এবং ফান্ডের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণের পাশাপাশি সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। ‘
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৮
জিপি