ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কোটা ইস্যুতে ক্লাস বর্জন, সেশনজটের আশঙ্কা ঢাবিতে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
কোটা ইস্যুতে ক্লাস বর্জন, সেশনজটের আশঙ্কা ঢাবিতে ক্লাসরুম ফাঁকা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর ক্লাসে ফিরেছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু দীর্ঘদিন প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নামলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।

কর্মসূচি ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকটি বিভাগে প্রথম দিকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হলেও বর্তমানে বড় সংখ্যক বিভাগে ক্লাস বর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে সেশনজটের আশঙ্কা।

কোটা আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স), মশিউর রহমান (সমাজ বিজ্ঞান) ও তারেক আদনানকে (আইন বিভাগ) গ্রেফতার করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে এই তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

পরে শহীদ মিনারে কোটা আন্দোলনকারীদের মানববন্ধনে ছাত্রলীগের হামলা হলে পরবর্তীতে অন্য বিভাগেও ক্লাস বর্জন শুরু হয়। এছাড়া নিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধন করে ইংরেজি, ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ।

এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিভাগে ক্লাস বর্জন করা হয়েছে সেগুলো হলো- শিক্ষা ও গবেষণা (আইইআর), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (এমবিএ), অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান (১ম ও তৃতীয় বর্ষ), উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (৩য় বর্ষ), লোকপ্রশাসন, আইআইটি, ইতিহাস, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য (চতুর্থ বর্ষ), ভাষা বিজ্ঞান, সংস্কৃত (৩য় বর্ষ), পরিসংখ্যান, পদার্থ বিজ্ঞান, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, অনুজীব বিজ্ঞান, প্রাণীবিদ্যা, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জনিয়ারিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, নিওক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং (৩র্থ বর্ষ), ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ। ক্লাসরুমে তালা ঝুলছে।  ছবি: বাংলানিউজঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা গত রোববার (১৫ জুলাই) থেকে ক্লাস বর্জন করে আসছে। মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) একটি ব্যাচের ক্লাস হলেও উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি মুনিরা দিলশাদ ইলা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এক সপ্তাহে দু’টি ক্লাস হয় একজন শিক্ষকের। সেক্ষেত্রে আমরা দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহ ক্লাস মিস করলে সর্বোচ্চ ৬টা ক্লাস মিস হয়। আর আমাদের নির্ধারিত প্রতি সেমিস্টারে ৩০টি ক্লাস থাকলেও স্যাররা ২২টির মতো ক্লাস নেন। সব মিলিয়ে বাকি সময়ে সমান সংখ্যক ক্লাস করা গেলে সেশনজটের কোনো সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে বুধবার (১৮ জুলাই) এক মানববন্ধন থেকে মশিউর রহমান না ফেরা পন্তর্য ক্লাস বর্জন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ক্লাস বর্জনের কারণে সেশনজটের একটা আশঙ্কা তৈরি তো হচ্ছে। কোটা সংস্কার নিয়ে সরকার যেহেতু একটি কমিটি গঠন করেছে, আমি আশা করব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসবে।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বাংলানিউজকে বলেন, সব বিভাগ তো আর ক্লাস বর্জন করেনি। অনেক বিভাগে সহপাঠী আটকের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্লাস বর্জন করছে। অনেকে সংহতি প্রকাশ করছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ বেলালী বাংলানিউজকে বলেন, আটকদের মুক্তি ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কোটা নিয়ে যে কমিটি করেছে সেটা পর্যবেক্ষণ করছি। এর আগেও আমরা সরকারের আশ্বাসে আস্থা রেখেছি, মিটিং করেছি। যদি আমরা আন্তরিকতার ঘাটতি দেখি তাহলে আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি আবার সিদ্ধান্ত নেবো। প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী হয় কোটা বাতিল, নয়তো পাঁচ দফার আলোকে সংস্কার করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেদের কর্ম নিজেরা ভালো বুঝবে। তবে তাদের উচিত হবে নিজেদের একাডেমিক লাইফ বিপন্ন হয় এরকম কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
এসকেবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।