আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন সাবেক এই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।
তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে দেখলাম ছাত্র ফেল করলে শিক্ষকের চাকরি যায়।
শিক্ষকদের উদ্দেশে মোতাহার হোসেন বলেন, ক্লাস এইট পর্যন্ত গ্রাজুয়েশন পড়িয়ে দিবেন, ফেল করলে আপনি স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যাবেন। অসুখ-বিসুখে মারা যাওয়ায় সেটা আলাদা, কিন্তু বাকি কাজ আপনাকেই করতে হবে। কেন আমরা দায়িত্ব নিচ্ছি না?
মোতাহার হোসেন বলেন, গণশিক্ষা কার্যক্রমটা ঠিক যেভাবে চলার কথা আমরা সেভাবে চালাতে পারছি না। এখানে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে, সবাইকে নিয়ে একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আজ যে গতিতে চলছে, ৭৩ শতাংশ মোট শিক্ষিত, বাকিরা অশিক্ষিত রয়ে গেছে। শুধু এই শিক্ষা দিলেই তো হবে না, যোগ-বিয়োগ, পেপার পড়া, নাম সই করা- এই শিক্ষা তো আমাদের বর্তমান গণশিক্ষার যে কার্যক্রম তাতে নেই। এর সঙ্গে জীবনব্যাপী শিক্ষা দিতে হবে। যে শিক্ষাই গ্রহণ করুক, তারা কিছু করে খেতে পারে।
‘কাজেই আমাদের আজকের দিনে শপথ নিতে হবে, আমরা এই দিকেই ধাবিত হবো দেশে সব লোককে শিক্ষিত করবো এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে...। আজ দেশে-বিদেশে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজন, কিন্তু তাদের আমরা শিক্ষিত করে তুলতে পারছি না।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর প্রণেতাদের একজন সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে শিক্ষানীতি চালু করার কথা ছিল। শিক্ষার স্তর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা করা ছিল। প্রাথমিক ক্লাস এইট পর্যন্ত এবং এটা বাধ্যতামূলক ও ফ্রি হবে। কিন্তু এখনও এর নাম-নিশানা আমরা খুঁজে পেলাম না।
তিনি বলেন, শিক্ষানীতি চালু করতে যে টাকার প্রয়োজন এটি আজ পর্যন্ত আমরা বরাদ্দ করাতে পারিনি। হয়তো আগামীতে আমাদের সরকার, শেখ হাসিনার সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে ইনশাল্লাহ। আমরা তখন বাস্তবায়ন করবো।
সমাপনী নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে জানিয়ে মোতাহার হোসেন বলেন, একবার বলে সমাপনী পরীক্ষা ক্লাস ফাইভে বন্ধ করতে হবে, একবার বলে এইটে বন্ধ করতে হবে। এটি তো কথা ছিল না। শিক্ষানীতিতে আছে ক্লাস এইটে গিয়ে গ্রাজুয়েশন হবে এবং বাধ্যতামূলক লেখাপড়া শেষ হবে তখন সমাপনী পরীক্ষা হবে। এটি হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে, অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে না। কিন্তু আমরা এখনও সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। এ জায়গায় পৌঁছার জন্য আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, নাইন-টেন-ইলেভেন-টুয়েলভ হবে সেকেন্ডারি এডুকেশন এবং সেখানে একটা ক্লিয়ার কাট পার্টিশন আছে, এটা উচ্চ শিক্ষা আর একটা হলো কারিগরি শিক্ষা। নাইন-টেন-ইলেভেন-টুয়েলভ-এর পর উচ্চশিক্ষায় চলে যাবে, আবার নাইন-টেন-ইলেভেন-টুয়েলভ কারিগরি শিক্ষা নিয়ে বিদেশে যাবে, কাজে যাবে। সারাবিশ্বে ১৮ বছর বয়সে কাজে যায় আর আমরা ৩০ বছরে কাজে যাই, আরও ২, ৪, ৫, বছর বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। জীবনের যে সূবর্ণ সময়, কাজ করার যে সুযোগ সেটা কিন্তু আমরা নষ্ট করে ফেলছি।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সবাইকেই ডিগ্রি পাস, মাস্টার্স ডিগ্রি পাস হতে হবে- এমনটি তো কথা নয়। এখন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ হয়েছে, দেশের জন্য বোঝা না হয়ে কাজের দিকে যেতে হলে সেদিকেই যেতে হবে।
গুণগত শিক্ষা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি উল্লেখ করে সংসদীয় কমিটির প্রধান বলেন, আমি মাঝে মাঝে নিজেই লজ্জায় পড়ি, স্কুলে যখন যাই অনেককেই অনুপস্থিত দেখতে পাই। নিজে খুব লজ্জাবোধ করি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী ১০ বছরে দেশের ব্যবস্থা বদলে যাবে। এখন যারা জন্ম নিচ্ছে তারা কেউ নিরক্ষর থাকবে না। আমরা স্বাক্ষরতা দিবস যদি পালন নাও করি, বাংলাদেশ তার প্রয়োজনে মাটি ফুঁড়ে আসমানে উঠে যাবে, সেই অবসন্থার মুখোমুখি আমরা।
সংসদীয় কমিটির সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর, মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফ-উজ-জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপর কুমার ঘোষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৮
এমআইএইচ/আরআর