ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ইলিশের জিনোম: আন্তর্জাতিক ডাটাবেজে শুধু বাকৃবির নাম আছে

বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
ইলিশের জিনোম: আন্তর্জাতিক ডাটাবেজে শুধু বাকৃবির নাম আছে ‘ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডি-নোভো অ্যাসেম্বলি সম্পন্ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন গবেষকরা। ছবি বাংলানিউজ

বাকৃবি (ময়মনসিংহ): ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বলি সর্বপ্রথম প্রস্তুত করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষণাদল। এজন্য ইন্ট্যারন্যাশনাল জিনোম ডাটাবেজে কেবল বাকৃবির নামটিই রয়েছে বলে দাবি করেছেন ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডি নোভো অ্যাসেম্বলি গবেষণাদলের প্রধান এবং বাকৃবির অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম। 

সম্প্রতি দেশের দুই খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’দল গবেষক পৃথকভাবে ইলিশ মাছের জীবন রহস্য নিয়ে  গবেষণা করে সফলতা পেয়েছেন। তবে প্রথমবারের মতো ইলিশের জীবন রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছেন বাকৃবি গবেষকদল।

 

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খান ইলিশের জীবন রহস্য প্রথমবারের মতো উন্মোচন করেছেন বলেও দাবি করা হচ্ছে।  

ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকেয়েন্সিং ও ডি-নোভো অ্যাসেম্বলি গবেষণাদলের প্রধান এবং বাকৃবির অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলমের দাবি, ইলিশের জীবন রহস্য উম্মোচনের গবেষণার কাজটি আমরাই প্রথম করেছি। সম্প্রতি এটি নিয়ে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠলেও এর দাবিদার কেবল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আমরা কাজ শুরু করি। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বলি প্রস্তুত হয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ইলিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আন্তর্জাতিক জিনোম ডেটাবেজ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে’ (এনসিবিআই) জমা করা হয় এবং ওই জিনোম ডাটাবেজ থেকে আমরা স্বীকৃতি পাই। অর্থাৎ ইন্ট্যারন্যাশনাল ডাটাবেজে কেবল বাকৃবির নামটিই রয়েছে এবং আমাদের তথ্যগুলোই কেবল খুঁজে পাওয়া যায়। অন্য কেউ কাজটি করলে তাদের তথ্য থাকতো। এছাড়া ইলিশের জিনোম বিষয়ে গবেষণালব্ধ ফলাফল ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এবং ১৮ জানুয়ারি অ্যামেরিকার সানডিয়াগোতে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও উপস্থাপন করা হয়।  

সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ‘ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডি-নোভো অ্যাসেম্বলি সম্পন্ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এমন দাবি করেন তিনি।  

এসময় গবেষকরা বলেন, আমরা (১০ সেপ্টেম্বর) গবেষণার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার জন্য অনেকদিন ধরে কাজ করছি। যখনই আমরা ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডি-নোভো অ্যাসেম্বলি সম্পন্ন শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজনের তারিখ নির্ধারণ করলাম এবং ওই গবেষকদলকে অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র পাঠালাম তখনই একটি সংবাদ মাধ্যমে তাদের কৃতিত্ব দিয়ে প্রতিবেদন ছাপানো হলো। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। একই বিষয়ে অনেকে একই সময়ে গবেষণা করতেই পারে। আমাদের গবেষণাটি অনেক আগে সম্পন্ন করেছি এবং বিভিন্ন স্থানে তার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি সুপার কম্পিউটারও ব্যবহার করেছি যার প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে গেলেই পাওয়া যাবে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ইলিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স এনসিবিআই-এ জমা করা হয়।

সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খানের সঞ্চালনায় এবং বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. এ. এম. ইয়াহিয়া খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দীন আহমদ এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ও সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা।

এদিকে, মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. হাসিনা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ইলিশের জীবন রহস্য প্রথমবারের মতো উন্মোচনের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।  

তিনি বলেন, আমরা ইলিশের জিনোম নিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে কাজ শুরু করেছি এবং সফলতার সঙ্গে কাজ শেষ করেছি। কাজটি শেষ করার পর আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমরা একটি জাতীয় দৈনিকে আমাদের গবেষণার সাফল্যের কথা জানাই। জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে যে কেউ কাজ করতে পারে। প্রথমবার কথা না করা নিয়ে তারা (বাকৃবি গবেষণাদল) যা বলেন সেটাই আপনারা লিখে দেন। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে, আমাদের কাজটি আমরা সাইন্স সাময়িকীতে প্রকাশ করবো। তখন আমাদের সাফল্য প্রকাশ হবে। আর আমাদের দেশে বিজ্ঞান নিয়ে কম আলোচনা হয়। যতটুকু আলোচনা হয় তা নেতিবাচক না হলে আমার ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের জন্যও ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।