স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানোর মতো প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে কখনোই পারবে না তার দিনমজুর পরিবার। ফলে এতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও উচ্চ শিক্ষালাভের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কায় ভুগছেন আসলাম।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর উত্তরপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুস ছালাম শেখের একমাত্র ছেলে আসলাম শেখ। ষাটোর্ধ্ব বাবা ছালাম শেখ কখনো রিকশা চালিয়ে আবার কখনো অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে তিনি তিনটি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি একমাত্র ছেলে আসলামের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে যাচ্ছিলেন। ভূমিহীন ছালামের স্বপ্ন তার ছেলে লেখাপড়া করবে। বড় অফিসার হয়ে বংশের অশিক্ষিত নাম ঘোচাবে। সংসারে অভাব-অনটন থাকা স্বত্তেও সন্তানের পড়াশোনার খরচের এতটুকু কমতি রাখেননি তিনি। এনজিও থেকে কিস্তিতে ঋণ নিয়ে তিনি সন্তানের পড়ার খরচ যুগিয়েছেন।
আব্দুস ছালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এতদিন খাইয়্যা না খাইয়্যা খুব কষ্টে ছওয়ালেক পড়াইচি। এ্যাহন আর পারমু না। শরীরটা ভাল না। পরিশ্রম আর বেশি কইরব্যার পারি না। কি কইরা পড়ামু। ’
আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘অর মাথা খুউব ভাল। তাই আরও পড়াইব্যার চাই। যদি কোনো সরকারি সাহায্য পাই তাইলে পড়াডা চালাইয়্যা যাইতে পারমু। ’
আসলামের বড় চাচা হানিফ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বংশ অনেক বড় হলেও সবাই দারিদ্র্য। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়া কারও কোনো সহায়-সম্পত্তি নাই। অর্থাভাবে এ বংশে কেউই তেমন লেখাপড়া করতে পারেনি। আসলাম এ বংশের গৌরব। কিন্তু টাকার অভাবে আসলামের পড়াশোনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন হানিফ শেখ।
আসলাম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ‘২৩ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আমি অনেক ভালো রেজাল্ট করেছি। বিজ্ঞান বিষয়ে মেধাতালিকায় ২৩তম স্থান পেয়েছি। চয়েস দিয়েছি ফার্মেসি বিষয়ে। আমি সেটাই পাবো। কিন্তু আমার বাবা টাকা দিতে পারছেন না। বাবা অসুস্থ্য, তিনি আগের মতো বেশি পরিশ্রম করতে পারেন না। এখন আমি তার কাছে আর টাকাও চাইতে পারছি না। ’
প্রতিবেশী সিরাজগঞ্জ বিটিসিএল’র জুনিয়র সহকারী ম্যানেজার সাফিউল হাসান শফি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম বিভাগে পাস করে। এরপর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছে। শুনেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে সে। কিন্তু অভাবের কারণে মেধাবী এ ছেলেটির এখন পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। ’
কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন পরিষরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (মেম্বার) সদস্য মো. জিন্নাহ মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে মেধাবী এ ছেলেটি উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করে দেশ ও দশের সেবা করতে পারবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
জিপি