ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২৫ নভেম্বর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ২৫ নভেম্বর খুবির কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন ও কবি জীবনান্দদাশ একাডেমিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের একাংশের দৃশ্য। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) দিবস রোববার (২৫ নভেম্বর)। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাজানো হচ্ছে গোটা ক্যাম্পাস। 

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ওইদিন সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিকেল সাড়ে ৫টায় শহীদ মিনার চত্ত্বর, অদম্য বাংলা ও কটকা স্মৃতিসৌধে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। এছাড়া ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুবি প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুবির ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাশ হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই। এর পর ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে চারটি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয়। পরে একই বছরের ২৫ নভেম্বর খুবির শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয় প্রথম খুবি দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় সেই থেকে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর খুবি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খুবি শিক্ষা কার্যক্রমের ২৮ বছর পূর্ণ করলো। খুবি ক্যাম্পাসে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্য ‌‌‘অদম্য বাংলা’।  ছবি: বাংলানিউজমহানগর খুলনা থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্লামারীতে খুবি অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুবির অবস্থান নবম। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, চারুকলাসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুবিতে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়।  

বর্তমানে খুবিতে ছয়টি স্কুল (অনুষদ) ও দু’টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এখানে মোট ২৯টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম ফিল এবং পিএইচডি দেওয়া হয়।  

স্কুলগুলোর মধ্যে কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজি, বাংলা এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন।  

আইন স্কুলের আওতায় রয়েছে আইন ডিসিপ্লিন। খুবি কটকা স্মৃতিসৌধ।  ছবি: বাংলানিউজজীব বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় রয়েছে অ্যাগ্রোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি, ফার্মেসি ও সয়েল ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিন।  

ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন।  

বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান অ্যান্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন।  

সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় আছে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন।  

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের আওতায় তিনটি ডিসিপ্লিন চালু রয়েছে। এগুলো হলো- ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্টমেকিং ও ভাষ্কর্য ডিসিপ্লিন।  

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীন এবারই প্রথম শিক্ষায় চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। এছাড়া এর আগেই মাস্টার অব এডুকেশন (এমএড) এবং পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (পিজিডিএড) প্রোগ্রাম চালু করা হয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪শ’। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে প্রায় সাত হাজার। এছাড়া কর্মকর্তা রয়েছেন আড়াই শতাধিক এবং কর্মচারী রয়েছে দুই শতাধিক। শিক্ষাকার্যক্রমের গত ২৮ বছরে ২৪টি ব্যাচ থেকে উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েট সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। যারা দেশে-বিদেশে দক্ষতা, সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে নানা পেশায় কাজ করছেন।  

খুবি ক্যাম্পাসে রয়েছে ৩টি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসভবন, পাঁচটি আবাসিক হল, মেডিকেল সেন্টার, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য পাঁচটি বাসভবন, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, ডাকঘর ও মসজিদ। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জ্ঞান সহায়তায় রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন ও শার্লী ইসলাম গ্রন্থাগার ভবন।
 
এছাড়া ১৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার নতুন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ঊর্ধ্বমুখী (পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পার্শ্বমুখী (প্রথম ও ৬ষ্ঠ তলা) ও ঊর্ধ্বমুখী (পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা) সম্প্রসারণ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত গেস্ট হাউজের পার্শ্ব এবং ঊর্ধ্বমুখী, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার ভবনে ঊর্ধ্ব ও পার্শ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শেষপর্যায়ে। এ প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় মসজিদের অবশিষ্ট অংশের নির্মাণ কাজ এবং তাজউদ্দিন আহেমদ প্রশাসন ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। চলতি অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুউচ্চ এবং সর্ববৃহৎ আয়তনের ১০তলা বিশিষ্ট জয়বাংলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।  

খুবি দিবসের প্রাক্কালে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান এক শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রকৃত অর্থে বিগত সময়ের কার্যক্রম মূল্যায়ণের দিন। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমানের প্রচেষ্টায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। খুবিতে উচ্চ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। চলতি প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০২১ সালের মধ্যে খুবি দেশের অন্যমত শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পূর্ণাঙ্গরূপ পরিগ্রহ করবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৮
এমআরএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।