ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছেই 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৯
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছেই 

বরিশাল: উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে টানা ১৫তম দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি চা‌লিয়ে যাচ্ছেন ব‌রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।  

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ব‌বিদ্যালয়ের প্রশাস‌নিক ভবনের সামনে নিচতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

এদিকে, উপাচার্যের (ভিসি) পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে পাওয়ার দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দুপুর ১টায় শেষ হলেও কোনো ফলাফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার সড়ক অবরোধ শেষে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিলো। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় এ আল্টিমেটাম শেষ হয়। এর মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ বা ছু‌টির লি‌খিত আবেদন না করায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।  

নতুন আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের একদফা দাবি আদায় না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত তারা এ আন্দোলন চা‌লিয়ে যাবেন।

এদিকে, ব‌রিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধের কারণে ব‌রিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ থাকে। এসময় সড়কের উভয়পাশে যানবাহনের দীর্ঘজটের সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়। তবে কর্মসূচি চলাকালে রোগী ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী যানবাহনসহ জরুরি কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হয়।  

মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি ২টা পর্যন্ত চলে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হবে।

অপরদিকে শিক্ষার্থীদের এ দাবির বিষয়ে সহমত প্রকাশ করে ১২ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করে।  

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হাকিমের দাবি, শিক্ষার্থীরা কিছু লোক ব্যবহার করছে। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাবেকরাও রয়েছেন।  

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আন্দোলন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‌‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেন। এর প্রতিবাদে জোরদার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

২৬ মার্চ থেকে তাদের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রধান, ডিসি অফিস ঘেরাও, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ, নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে লিখে ভিসির পদত্যাগ দাবি, ভিসির কুশপুতুল দাহ ও মশাল মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

এজন্য আন্দোলনের দু’দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

শনিবার (৬ এপ্রিল) বরিশাল সার্কিট হাউজে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত লিখিত এক নোটিশে রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা সে নোটিশ প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এদিকে, রেজিস্টারের দেয়া নোটিশের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোববার থেকে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তারা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে যেতে পারছেন না।

পাশাপাশি একইদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল তাদের কার্যক্রম চা‌লিয়ে রাখলেও বাসগুলোতে আশানুরূপ শিক্ষার্থীর দেখা মিলছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৯
এমএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।