ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ইবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত, আটক ২২

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
ইবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত, আটক ২২ ডিন অফিসের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাংলানিউজ

ইবি: ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে ইবি ও কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশ।  

বুধবার (২৪ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন থেকে তাদের আটক করা হয়। আটক শিক্ষার্থীদের কুষ্টিয়া সদর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

 

ইবি থানার কর্মকর্তা রতন শেখ বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল  থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অঘোষিত ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। সকাল থেকেই মাইকিং করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রকম মিছিল, মিটিং, এবং শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র বহনের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
 
পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ থেকে শিক্ষার্থী বহনকারী বাস বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। সকালে শিক্ষক, কর্মকর্তাদের বাস এলেও শিক্ষার্থীদের কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে আসেনি। পাশাপাশি ছাত্রীদের হল থেকে কোনো শিক্ষার্থীদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানা গেছে।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আন্দোলন থামাতে এভাবে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষার্থীদের মনে বিরুপ প্রক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘পাবলিক  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একটা চিরচারিত ব্যাপার। ইতোপূর্বে শিক্ষক, কর্মচারীরা আন্দোলন করলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে যায়নি। আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেখাচ্ছে। এতে প্রশাসন ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। ’

জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনের সামনে অনশনে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ অনশন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়।

বেশকিছুক্ষণ ধরে প্রশাসন থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ডিন কক্ষে তালা দেয়। রাত ৯টায় অবরুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করতে আসেন অনুষদের ডিন ড. মমতাজুল ইসলাম ও ছাত্র-উপদেষ্টা ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ। তারা ভবনের ভেতরে ঢুকলে তাদেরকেও অবরুদ্ধ করে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা।

প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে রাত ১১টার দিকে ওই ভবনের সামনে কুষ্টিয়া ও ইবি থানা থেকে পুলিশ মোতায়েন করে  প্রশাসন। এসময় কুষ্টিয়া সদর থানা পুলিশের অতিরিক্ত ডিএসবি মোস্তাক, মীরপুর জোনের সার্কেল এএসপি ফারজানা ইসলাম এবং ইবি থানার ওসি রতন শেখ শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন।  

এতে কোনো কাজ না হওয়ায় রাত ১টার দিকে শিক্ষকদের উদ্ধার করতে অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান ও প্রক্টর আনিছুর রহমান ও অধ্যাপক আহসানুল আম্বিয়া র‌্যাব নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তারা রাত ৪টা পর্যন্ত চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন।  

পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা গেটের তালা ভেঙে ভবনে প্রবেশ করে শিক্ষকদের উদ্ধার করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হয়। এসময় সেখান থেকে ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রতন শেখ বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কুষ্টিয়া সদর থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। আমরা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এর পেছনের মোটিভটা জানার চেষ্টা করছি। ’

এদিকে শিক্ষার্থীদের আটকের প্রতিবাদে সকাল ১০টা থেকে প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।