ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দুপুর হলেই সেলিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝোলে তালা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
দুপুর হলেই সেলিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝোলে তালা

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার দুর্গম লেছরাগঞ্জ ইউনিয়নে অধিকাংশই জেলে ও কৃষক পরিবারের বসবাস। ২০১২ সালে এ ইউনিয়নের সেলিমপুর এলাকায় সরকারিভাবে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হলেও সেখানে শিক্ষকরা তেমন আসেন না। শিক্ষকেরা যাও আসেন দুপুরের পরপরই তালা ঝুলিয়ে চলে যান।

এদিকে বিদ্যালয়টিতে পাঁচটি শিক্ষক পদ থাকলেও রয়েছেন চারজন শিক্ষক। বাকি একটি পদ শূন্য রয়েছে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানছে না বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা য়ায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ট্রলারে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দুর্গম লেছরাগঞ্জ চরে। এ চরাঞ্চলের কয়েক হাজার নারী-পুরুষের বসবাস। এখানকার কোমলমতি বাচ্চারা কেউ এক কিলোমিটার বা তারো বেশি রাস্তা পায়ে হেঁটে সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে আসে। তবে বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা যাও আসেন দুপুরে বিদ্যালয়টি ছুটি দিয়ে তারা চলে যান। এছাড়া মাসের অধিকাংশ সময়ই ক্লাস রুমে তালা ঝোলানো থাকে। এজন্য বাধ্য হয়ে চরাঞ্চলের অধিকাংশ অভিভাবকরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে লেখাপড়া করাচ্ছে তাদের সন্তানদের।

সেলিমপুর এলাকার শেখ মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের লেছরাগঞ্জ এলাকা এমনিতেই অবহেলিত। আমরা লেহাপড়া করবার পারি নাই, মনে অনেক আশা আছিলো পোলাপাইনরে পড়ামু। এ্যার মধ্যে প্রাইমারি স্কুলের মাস্টররা আসেনা ক্যমতে পড়ামু বুঝবার পারি না। যাও আসে তালা খুইলা বসতে বসতে আবার চইলা যায় হ্যাঁরা। ’ 

দুপুরের মধ্যে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে চলে যান শিক্ষকেরা।  ছবি: বাংলানিউজ

সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য কামাল খান বাংলানিউজকে বলেন, সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার নিজের সুবিধামতো একটি কমিটি করে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন। বর্তমানে তিন হাজার টাকা বেতন দিয়ে একটি প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে স্কুলটিতে। এতে করে লেছরাগঞ্জের অধিকাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি থেকেই ঝরে পড়ছে।

সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার মোবাইলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গিয়ে শিশুদের পাঠদান করাই। এখনো আমি বিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছি। ’

তখন বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্ট ওই বিদ্যালয়ে নিজের অবস্থানের কথা জানালে সঙ্গে সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।  

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফা রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। সেলিমপুর সরকারি বিদ্যালয়ের কেন শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।