ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পাহাড়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৯
পাহাড়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা

বান্দরবান: বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বপ্নের নাম। পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষা লাভের নতুন একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে দেশের শততম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অনুমতি মিলেছে ইংরেজি সাহিত্য, এমবিএ, বিবিএ, সমাজবিজ্ঞান ও নৃ-বিজ্ঞান, গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ৬টি বিষয়ে পাঠদানের। এছাড়াও কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম’সহ আরও কয়েকটি বিষয়ে প্রস্তাবিত সিলেবাস জমা দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে।

৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বান্দরবান সদরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায় একটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বছরে দুটি করে সেমিস্টার ভিত্তিতে প্রতিটি ব্যাচে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি বিষয়ে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করলেও দ্বিতীয় ব্যাচে ছয়’টি বিষয়ে কমপক্ষে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী চায় প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ১৪টি ক্লাস রুমে ৫০ জন করে ৭শ শিক্ষার্থী পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে প্রতিষ্ঠানের। দুটি কম্পিউটার ল্যাবও সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটাও বিশাল, নজর কাড়ার মত। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সবধরনের বই রয়েছে এখানে। কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি’সহ একটি ফ্লোর পুরোটায় ওয়াই ফাই সংযোগের আওতায় তৈরি করা হয়েছে। তবে সাময়িকভাবে বান্দরবান পৌর শহরের কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী এ ক্যাম্পাস।  

ক্যাম্পাসটি সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বহুতল ভবনের তিনটি ফ্লোরে ৩৬ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট অস্থায়ী এ ক্যাম্পাসের তৃতীয় তলায় রয়েছে ক্লাস রুম। চতুর্থ তলায় লাইব্রেরি এবং ক্যাফেটেরিয়া। ভিসি অফিস, টিচারস রুম এবং রেজিস্ট্রার’সহ প্রশাসনিক কার্যক্রমের অফিসগুলো রয়েছে দ্বিতীয় তলায়। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নযাত্রার পথেই হাটছে বান্দরবানবাসীর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে সূয়ালক ইউনিয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানেই স্থানান্তরিত হবে যাবতীয় কার্যক্রম।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নুরুল আবছার জানান, ফেব্রুয়ারিতে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ছয়টি বিষয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বান্দরবানবাসীর জীবনে যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় নামের উজ্জ্বল পালক। জুলাই মাসে নতুন করে দ্বিতীয় সেমিস্টারের ভর্তি শুরু হয়। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং কক্সবাজার বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মধ্যখানের বিশাল এ অঞ্চলটিতে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাই পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়াসহ আশপাশের এলাকাগুলোতেও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢেউ লেগেছে। তিনি আরও জানান, আপাতত ছাত্রীদের জন্য একটি হোস্টেল ভাড়া করা হয়েছে, সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ছাত্রদের জন্যে আবাস তৈরির কাজও চলছে। তবে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হলে একটি করে বিষয় আস্তে আস্তে স্থানান্তরিত করা হবে।
বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশাবান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কো-চেয়ারম্যান ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. এ এফ ইমাম আলী। শিক্ষক নিয়োগের কাজটিও প্রায় শেষ হয়েছে। আরো অনেকগুলো আবেদনপত্র রয়েছে যাচাই-বাছাই করে মেধাবীদের যুক্ত করা হবে  এই প্রতিষ্ঠানে, অন্যান্য লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যেই ইউজিসির অনুমোদন মিলেছে। আর জেলা ঘোষণার চার দশক না পেরোতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বান্দরবানবাসীর। নবযাত্রার সঙ্গে বান্দরবানবাসীর জীবনে খুলবে স্বপ্নের সহস্র দুয়ার।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আরও বলেন, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হবে শতভাগ আবাসিক। আর এ জন্য জেলা সদরের প্রবেশমুখ সুয়ালকে একশ একর জমি নেওয়া হয়েছে। সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। তবে ‘ইটের খাঁচার মত গাদা গাদা ভবন নির্মাণ করা হবে না এ ক্যাম্পাসে। পাহাড়ের সৌন্দর্যে প্রকৃতির ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস।

বীর বাহাদুর আরও বলেন, একাডেমিক ভবনের বাইরে পাহাড়, জলাশয়, বন-বনানী, পাখির কিচির মিচির, নির্মল হাওয়া আর শিমুল-পলাশের আগুন রাঙা উদ্যানে বেড়াতে বেড়াতে শিক্ষার্থীরা নেবে শিক্ষার পাঠ। এমন একটা বিদ্যাপীঠ গড়ার স্বপ্ন আর চিন্তা ভাবনা রয়েছে আমাদের।

সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ প্রথমদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কয়েকটি বৈঠকের পর স্থানীয় কয়েকজন সমাজসেবক এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়। তাদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। ’ এ উদ্যোগে পাশে এসে দাঁড়ায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদও। উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত যৌথ চুক্তির মাধ্যমে স্বপ্নপাখা ডানা মেলতে আরম্ভ করে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশ এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২৫ শতাংশ বহন করবে। সে অনুযায়ী জমি ক্রয় এবং অস্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।

এদিকে ১ সেপ্টেম্বর সুয়ালক ইউনিয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ১শ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভূমির উপর ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন করেন বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াছির আরাফাত, শিক্ষক মন্ডলীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, সকলের সহযোগিতায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ১০০ একর জমির উপর বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শুরু হলো। এ বিশ্ববিদ্যালয় পুরো কাজ সমাপ্ত হলে এখানে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হতে পারবে এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারবে। পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর আরো বলেন,অনেক সরকার গেল আর এলো। কোন সরকারই পাহাড়ের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেনি, শুধু মাত্র বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে এখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেছেন।  

পার্বত্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা আশাকরি বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আন্তরিকতায় এ বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় আরো এগিয়ে যাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে পাহাড়ের সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সব সম্প্রদায়ের পরিবারের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।