এদিকে নতুন এসব বই বাঁধাইয়ের কাজ পেয়ে ভাগ্য বদলেছে বাইন্ডার বা বাঁধাইকারদের।
ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেক বাইন্ডারের কাছে ভিড় করছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বাইন্ডাররা বই বাঁধাইয়ের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ফেনী শহরের বড় মসজিদ রোড একাজের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে কাজ করছেন নুরুন্নবী, দুলাল, ইকবাল, বাদশা, মামুনসহ কাগজ ও স্টেশনারি ব্যবসায়ীরা।
বড় মসজিদ রোডে বাঁধাইয়ের কাজ করেন বাইন্ডার নুরুন্নবী, নবী ভাই নামে সমাধিক পরিচিত তিনি। বাংলানিউজকে তিনি জানালেন, বছরের শুরুতে নতুন বই দেয়ার পর বই বাঁধাইয়ের খুব চাপ তৈরি হয়। প্রত্যেকেই এসে দ্রুত ডেলিভারি নিতে চান। ফলে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। বছরের প্রথম দুই মাস বাঁধাইকাজের খুব চাপ থাকে। এরপর ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। গতবছর তিনি প্রায় ২৫ হাজার বই বাঁধাই করেছেন বলে জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবছর ফেনীর ৬টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল মাদ্রাসা ও কারিগরি বিদ্যালয়ের ৪ লাখ ৪ হাজার ৬শ ২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৬শ ৫১টি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
একই রোডে বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন ইকবাল। একজন ভালো বাইন্ডার হিসেবে যশ থাকলেও এ পেশা পরিবর্তন করেছেন পাঁচ বছর আগে। তবে বছরের শুরুতে নতুন বই এলে তিনমাস বই বাঁধায়ের কাজ করেন।
তিনি বললেন, নতুন বছর এলে লাভজনক কাজটি করে কিছু টাকা জমাতে পারি। অল্প সময়ে বেশি আয় করা যায় তাই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুটি মাস বই বাঁধাই করি।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক শ্রেণীর বই বাঁধাইয়ের কাজই তাদের কাছে বেশি আসে। দুই মাসে তিনি ১০ হাজারের বেশি বই বাঁধাই করে এক লক্ষ টাকার বেশি আয় করেন।
কাগজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাদিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুরুল হুদা জানান, একসময় বাঁধাইয়ের প্রয়োজনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছিল। সারাবছর আমরা বই, খাতা বাঁধাইয়ের কাজ চালিয়ে নিতাম। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বেতনভূক্ত একাধিক বাইন্ডার ছিল। এখন বাজার ছোট হয়ে গেছে, বাইন্ডাররা আলাদাভাবে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বড় মসজিদ রোডে রাহাত এন্টারপ্রাইজ, নোমান পেপার, রুমী পেপারসহ শহরে একাধিক প্রতিষ্ঠান বই বাঁধাইয়ের করছে।
কাগজ ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত সোহেল। তিনি বললেন, সবাই তো আর নতুন বই বাইরে বাঁধাই করেন না। অনেকে ঘরেই বই বাঁধাই নিজেরাই করে থাকেন। বছরের শুরুতে আমাদের ক্র্যাপ কাগজ, বই বাঁধার সুতো, সুঁই ইত্যাদি বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। আগে বিক্রির পরিমাণ বেশি থাকলেও, ইদানীং তা কমে গেছে।
শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে হোসেনীয়া লাইব্রেরির সামনে সাময়িকভাবে বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন চৌধুরী ও রমজান নামে দুইজন বাঁধাইকার। রাজাঝির দিঘীর পাড়ে বই মার্কেটের সামনে কাজ করছেন দুলাল, রতন ও সাহাবউদ্দিন। এরা সবাই ভাসমান বাইন্ডার। এদের কোনো স্থায়ী দোকান নেই।
দুলাল বলেন, বছরের শুরুতে যে পরিমাণ কাজ থাকে তাতে আমার দুই লক্ষ টাকা আয় হয়। সারাবছর খাতা বাঁধাই করে চলি।
এছাড়াও শহরের রেলগেটে বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন ইছহাক ও বাবলু। শান্তি কোম্পানি রোডের মাথায় ফাতেমা লাইব্রেরি, জিএ একাডেমি স্কুলের সামনে আরও তিনজন বাইন্ডার বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন।
বড় মসজিদ রোডে বাদশা একজন প্রবীণ বাঁধাইকার। ছেলে মামুন রয়েছেন বাবার সাথে। দ্রুত ও চটজলদি সেবা দিতে তিনি ছেলেকে কিছুদিনের জন্য বই বাঁধাইয়ের কাজে যুক্ত করেছেন।
তিনি জানান, সারাবছরে সাকুল্যে ২০ থেকে ২৫ হাজার বই বাঁধতে পারেন। তবে নতুন বই বাঁধাইয়ের কাজ বেশি। সহজ কাজ তাই লাভও অনেক বেশি।
তিনি আরও জানান, শহরের প্রায় প্রতিটি স্কুলের সামনেই ভাসমান বাঁধাইকার আছেন। তারা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুটো মাস নতুন বই বাঁধাইয়ের কাজ করে থাকেন।
ভাসমান বাঁধাইকারদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদশা বলেন, এরা জেলার বাইরে থেকে এসে আমাদের কাজ বাগিয়ে নেয়। আমার সারা বছর ফেনীর মানুষদের বই বাঁধাইয়ের কাজ করে দিই। অথচ নতুন বই বাঁধাইয়ের সময় হলেই এরা উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের আয়-রুজিতে ভাগ বসায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২০
এসএইচডি/জেএম