ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মুখে ভর দিয়ে লিখে বৃত্তি পেলো সেই লিতুন জিরা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
মুখে ভর দিয়ে লিখে বৃত্তি পেলো সেই লিতুন জিরা

যশোর: দুই হাত-পা ছাড়াই জন্ম নিয়ে মুখে ভর দিয়ে লিখেই প্রাথমিক সাময়িক (পিইসি) পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছে সেই লিতুন জিরা। 

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফলে এ কৃতিত্ব অর্জন করে লিতুন।

লিতুন জিরা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শেখ পাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে।

সে এবার উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।  

এর আগে লিতুন জিপিএ-৫ অর্জন করে। বৃত্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান।

লিতুন পর নির্ভর হয়ে সমাজের বোঝা হতে চায় না। সে পড়ালেখা শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে আর দশজন মানুষের মতো আত্মনির্ভশীল হতে চায় জন্ম থেকে দুই হাত-পা ছাড়া জন্ম নেয়া লিতুন। মুখ দিয়ে লিখেই মেধার স্বাক্ষর রেখেছে এই শিক্ষার্থী।  

স্থানীয়রা বাংলানিউজকে বলেন, লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহী লিতুন প্রখর মেধাবী। হুইল চেয়ারেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে এ-প্লাস পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখে লিতুন। মঙ্গলবার প্রকাশিত বৃত্তির ফলাফলে লিতুন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি অর্জন করেছে।  

তার বাবা উপজেলার এ আর মহিলা কলেজের প্রভাষক। তিনি গত ১৭ বছর ধরে ওই কলেজে চাকরি করলেও আজও কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তার বাবাই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় খুব কষ্টে তাদের সংসার চলে।
 
লিতুনের বাবা হাবিবুর ও মা জাহানারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, জন্মের পর মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে নানা চিন্তা পেয়ে বসছিল। এখন মেয়ের মেধা আশার সঞ্চার করেছে আমাদের। লিতুন আর ১০ জন শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়া, গোসল সব কিছুই করতে পারে। মুখ দিয়েই লিখে সে। তার চমৎকার হাতের লেখা যে কারো দৃষ্টি কাড়বে।  

কথা হয় লিতুনের সঙ্গে। সে বাংলানিউজকে বলে, আমার একটাই ইচ্ছা, কারও ওপর নির্ভর না হয়ে লেখাপড়া শিখে নিজেই কিছু করতে চাই।  

তবে, সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করা দাদুর জন্য তার খুব মন খারাপ। দাদু বেঁচে থাকলে বৃত্তি পাওয়ার খবরে তিনি খুব খুশি হতেন বলে জানায় লিতুন জিরা।

এর আগে, চলতি বছর প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় (পিএসসি) জিপিএ-৫ পেয়েছিল লিতুন। সেসময় বাংলানিউজ ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে অদম্য এ মেধাবীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে লিতুনের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা উঠে আসায় সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হয় দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের। তাৎক্ষণিকভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীর লিতুন জিরার পথচলায় সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি বসুন্ধরা গ্রুপের ডিজিএম (হেড অব বাল্ক সেলস) মো. রেদোয়ানুর রহমান লিতুন জিরার বাবার হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। এছাড়াও লিতুন জিরার পরিবারের সদস্যদের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে নানা রকম উপহার সামগ্রি দেওয়া হয়।  

** মুখে ভর দিয়ে লিখে জিপিএ-৫
** মণিরামপুরের অদম্য লিতুনজিরার পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
ইউজি/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।