ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাঁচ বড় বিশ্ববিদ্যালয় রাজি না হলেও তারা পরে কোনো সময় এ পদ্ধতিতে আসতে পারে- এমন পথ খোলা রেখেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, প্রকৌশল ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি ধাপে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।
তবে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে আলাদাভাবে তিনটি ভর্তি পরীক্ষা হবে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ইউজিসিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
চলতি বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত এবং পরে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউজিসি।
কিন্তু ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উচ্চশিক্ষার এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এ পরিস্থিতিতে আবারও সভা ডাকে ইউজিসি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ প্রক্রিয়ায় দেশের ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, দেশের বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে। আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি। যারা আসবে, তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে যুক্ত করব।
সভায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা এ পদ্ধতিকে সাধুবাদ জানালেও তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে যুক্ত হতে পারছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
‘তবে আমাদের চেষ্টা ও দরজা খোলা থাকবে। যারা এতে যুক্ত হতে যাবে তাদের নেওয়া হবে। ’
ইউজিসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ইউজিসি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মার্চে বসবে ইউজিসি।
ইউজিসির সদস্য মো. আলামগীর বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। তারা উপ-কমিটি তৈরি করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন, প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়ন, ফলাফল প্রকাশসহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে আগের মতো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে। আবেদনকারীদের রোল নম্বর অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজন করে সেই অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলাফল পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে সবকিছু কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপ-কমিটির সদস্যদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
সভায় জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় কলেজগুলোতেও আবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, সাতটি কৃষি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি, ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি এবং নয়টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে তিনটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় কোন গ্রুপে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে, সেটি ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সভায় ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত প্রতিনিধি এবং ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম এবং প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উপস্থিত ছিলেন না।
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লজিস্টিক সহযোগিতা ছাড়া কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব। ফলে নতুন করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা নীতিগতভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একমত হয়েছেন।
প্রফেসর শহীদুল্লাহ বলেন, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বে বিভিন্ন টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হবে। টেকনিক্যাল কমিটি ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য লিড বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করবে। এ কমিটি ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে কাজ করবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান এও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা সবাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।
প্রফেসর ড. আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। আশা করা যায়, ইউজিসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ কমবে এবং অর্থ সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
এমআইএইচ/টিএ