দীর্ঘ ১২ বছরে স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। যৌবনদীপ্ত তরুণ-তরুণীরা পায় স্বাধীনতার স্বাদ ও বন্ধু নির্বাচনের অধিকার।
তার মতে, এখানেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা। এ বন্ধুত্ব জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে উঠতে শেখায়, শেখায় সহিষ্ণুতা। বন্ধু ছাড়া ক্যাম্পাস যেন মরুভূমি। প্রয়োজনে বন্ধুরাই অবতীর্ণ হয় মা, বাবা, ভাইয়ের ভূমিকায়।
এ বন্ধুত্বের বন্ধন আরও মজবুত করতে ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুত্বের চার বছর পূর্তিতে গত বুধবার বসন্তের এ স্নিগ্ধ সকালে একসঙ্গে মিলিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের (চতুর্থ বর্ষ) শিক্ষার্থীরা। গণরুম থেকে শুরু করে ক্লাস ফাঁকি, প্রক্সি, অগোছালো আড্ডা, শহীদ মিনারে ক্লাস শেষের আড্ডা, দল বেঁধে ঘোরাঘুরি, রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে গলা ছেড়ে গান গাওয়া, চাঁদা তুলে জন্মদিন পালন করার একেকটি অধ্যায় যেন রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। এসব স্মৃতি মনের গহীনে গেঁথে রাখতে চতুর্থ বর্ষপূর্তির এ আয়োজন তাদের। ‘প্রবল প্রলয়ে পঁয়তাল্লিশ প্রণয়ে’ স্লোগানের এ উৎসবে শিক্ষার্থীদের কোলাহলে বুধবার (১১ মার্চ) পরিযায়ী পাখির ক্যাম্পাস সেজেছিল নতুন সাজে।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে চতুর্থ বর্ষপূতি উদযাপনের শুভ সূচনা করেন শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়াও ফানুস উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ, পথশিশুদের খাদ্য বিতরণ, মুভি উৎসব, ক্যাম্পাস পরিষ্কার ও ডাসবিন স্থাপন করেন তারা।
দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা সুবাহ বলেন, কালোর ওপর লাল রংয়ের একই টি-শার্ট গায়ে সারা ক্যাম্পাস পাখির মত ঘুরে বেড়িয়েছি। আমরা দেহ ভিন্ন হলেও প্রাণ এক। টি-শার্টে লেখা বন্ধুদের জন্য স্মৃতি কথা, র্যালি, গানবাজনা আর নানা রকম হই-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বের এ দিনটি পার করলাম। সারা দিন চললো অবিরত রঙের খেলা। বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো চার বছরের বর্ণিল স্মৃতিগুলো এক-দুই কথায় লিপিবদ্ধ হয়ে গেল স্মৃতির ভাণ্ডা রে। সেই টিশার্ট এখন এক স্মৃতির অ্যালবাম। আমাদের এ বন্ধুত্ব নিয়েই হয়তো কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- ‘আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি, থাকবে সবাই, থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী! আসবে শিশির-রাত্রি! থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন, থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন, বঁধুর বুকের পরশনে আমার পরশ আনবে মনে- বিষিয়ে ও-বুক উঠবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!’
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২০
এফএম