ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা-ভর্তি করাতে পারবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২০
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা-ভর্তি করাতে পারবে ইউজিসির লোগো

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

বৃহস্পতিবার (৭ মে) গাইডলাইনটি ইউজিসি ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঠানো হয়েছে।

গাইডলাইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলতি সেমিস্টারের অসমাপ্ত কার্যক্রম (পাঠদান, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন) অনলাইনে সম্পাদন করতে পারবে।

পাশাপাশি আগামী সেমিস্টারেও শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে।

করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ গাইডলাইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ইউজিসি, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ওই সভার সিদ্ধান্তে গাইডলাইন প্রস্তুত করেছে ইউজিসি।

চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিষয়ে নির্দেশনা

যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে সন্তোষজনকভাবে পরিচালনা করছে, তাদের জন্য দু’টি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ক. কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আগের মতো চলতি সেমিস্টারেও কোর্সগুলোর অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির ওপর অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকবে, তবে ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে। অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোনো অনলাইন প্লাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়ের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলমান নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করবে।

খ. কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আগের মতো চলতি সেমিস্টারে কোর্সগুলোর অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির ওপর অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকবে। এ বিষয়ে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোনো অনলাইন প্লাটফর্মের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে।

চলমান সেমিস্টারে তত্ত্বীয় কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে রেজিস্ট্রিকৃত শিক্ষার্থীদের অনলাইনের মাধ্যমে এসব বিষয়ের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচি (যা ৩০% মত) সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে এবং অনলাইনের কার্যক্রম শুরুর আগে চলমান সেমিস্টারের বিভিন্ন বিষয়ে ইতোপূর্বে ক্লাস উপস্থিতি, পারফরমেন্স, ক্লাসটেস্ট, মিডটার্ম পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে যা মূল্যায়ন করা হয়েছে তার নম্বর এবং অনলাইনের পঠিত অংশের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট, কেইস স্টাডি, ভাইভা (ভিডিও ডিভাইস অন অবস্থায়), ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশন নিয়ে যথাযথ স্বচ্ছতা ও মান নিশ্চিত করে মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়ে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন হলে পূর্বের সেমিস্টারে ফলাফল বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সব বিষয়ের ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকাশ করতে হবে।

ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া, এর ওপর পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই অতিরিক্ত সময় বা পরে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে।

দু’টি বিকল্প প্রস্তাবের যে কোনো একটি নিতে হলে চলমান সেমিস্টারে অনলাইনে নেওয়া ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ন্যূনতম ৬০ শতাংশ হতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ শর্ত পূরণ করেছে কেবল তারাই দু’টি বিকল্প প্রস্তাবের মধ্যে একটি প্রস্তাব নেবে তা লিখিতভাবে ১৭ মের মধ্যে উইজিসিকে জানিয়ে অনুমোদন নিতে হবে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় চলমান সেমিস্টারের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করতে পারেনি:

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনও চলতি সেমিস্টারের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করার জন্য করোনা ভাইরাস সংকটকালীন অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেনি বা নিকট ভবিষ্যতে শুরু করার পরিকল্পনা নেই, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে চলতি সেমিস্টারের অসমাপ্ত ক্লাস, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন কী পদ্ধতিতে অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করবে তার একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি ও পরিকল্পনা লিখিতভাবে কমিশনকে জানিয়ে অনুমোদন নিতে হবে।

নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি ও পরবর্তী সেমিস্টার শুরু সংক্রান্ত নির্দেশনা

কমিশন অনুমোদিত প্রোগ্রামগুলোর অনুমোদনপত্রে বর্ণিত শর্তাদি এবং কমিশন প্রণীত ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে আগামী জুনে অনলাইনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যাবে। তবে কোনোক্রমেই প্রোগ্রাম অনুমোদনপত্রের কোনো শর্ত লঙ্ঘন করা যাবে না।

চলমান সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী সেমিস্টারের কোর্স রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস করার সুযোগ পাবে।

পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস আগামী ১ জুলাই শুরু করা যাবে।

বর্তমান পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনে নেওয়া যাবে।  তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের মতো সাধারণ নিয়মেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

সাধারণ নির্দেশনা

ক্লাস লেকচার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট/অনলাইন পোর্টালে নিয়মিতভাবে আপলোড করতে হবে। এছাড়া, প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ই-মেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া (হোয়াটস অ্যাপ, ফেইসবুক, মেসেঞ্জার গ্রুপ ইত্যাদি) মাধ্যমে ক্লাস লেকচারসহ সংশ্লিষ্ট অন্য স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস (অডিও, ভিডিও ইত্যাদি) শিক্ষার্থীদের নিকট প্রাপ্তি/ পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষকদের নিবিড়ভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং নিয়মিতভাবে কোর্স ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সক্ষমতা নেই সেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনে ইউজিসির বিডিরেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং এটুআই এর সহযোগিতায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যথেষ্ট সক্ষমতা সৃষ্টি করবে।

করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি আগের মতো নিয়মিতভাবে পরিশোধ করতে হবে।

করোনা সংকটের কারণে আর্থিক সমস্যায় পড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে বিদ্যমান সেশন/টিউশন/অন্য ফি মওকুফ/হ্রাস/ইনস্টলমেন্টে দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

করোনা সংকটকালীন সৃষ্ট আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ সময়ে ফি আদায়ে মানসিক চাপ দেওয়া সমীচীন নয় বিধায় তা পরিহার করে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৯ (৪) ধারা অনুসরণপূর্বক বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ অবারিত করতে হবে।

কোনো শিক্ষার্থী করোনা ভাইরাস সংকটে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়া, চরম আর্থিক অস্বচ্ছলতা বা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে না পারলে/সক্ষম না হলে তাকে পরবর্তীকালে অসমাপ্ত কোর্স সম্পন্ন করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া কোনো শিক্ষার্থী তার গ্রেড (করোনাকালীন প্রাপ্ত) উন্নয়ন করতে চাইলে পরবর্তী সেমিস্টারে তাকে বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে সে সুযোগও দিতে হবে এবং উভয় ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অতিরিক্ত ফি আরোপ করা যাবে না।

শিক্ষার সব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান করোনা ভাইরাস জটিলতা সংক্রান্ত ও শিক্ষার্থীদের যে কোনো অভিযোগের বিষয়ে স্ব স্ব বিভাগীয়/অনুষদের শিক্ষকদের সমন্বয়ে ৩/৪ সদস্য বিশিষ্ট আন্তঃকমিটি গঠন করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

করোনাকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশ্ববিদ্যায়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার সংশোধন করতে হবে।

যে কোনো পরীক্ষা নেওয়ার অন্তত পাঁচ থেকে সাত দিন আগে শিক্ষার্থীদের যথানিয়মে অবহিত করতে হবে।

ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতির অনুপ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের আইসিটি ব্যবহারে এবং অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে যাতে করে অনলাইনে কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ ক্লাসের মাধ্যমে পাঠদান সম্পন্ন করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকার থেকে জারি করা নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন ও অনুসরণ করতে হবে।

এছাড়া এ সংক্রান্ত বিষয়ে যে কোনো পর্যায়ে কোনো পরিবর্তন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন হলে কমিশনের পূর্ব অনুমোদন অবশ্যই নিতে হবে।

ইউজিসি পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গাইডলাইনে শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যমান শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় কমিশন প্রণীত নির্দেশনাগুলোর প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২০
এমআইএইচ/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।