অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের (সেশন ২০১৬-১৭) শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরী শনিবার (১৩ জুন) নিজের ফেসবুক ওয়ালে মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার স্ট্যাটাসটির সমালোচনা করে তার শাস্তি দাবি করেন।
তার এ স্ট্যাটাস কুরুচিপূর্ণ উল্লেখ করে সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি অকিল উদ্দিন বলেন, ইশফাকুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি (মামলা নম্বর-৫) নথিভুক্ত করা হয়েছে।
মাহিরের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে তিনি। বাকি জাতীয় নেতাদের উত্তরসূরিদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত তিনি। আওয়ামী লীগ যখন রাস্তায় মাইর খাইতো তখন সব জায়গায় এ লোককে দেখা যাইতো। রাজপথ কাঁপানো নেতাদের মধ্যে তিনি আছেন। আবার ২০০২ দুদক এর মামলা এবং ২০০৮ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘পকেট কাঁপানো’ নেতাদের মধ্যেও তিনি আছেন। ২০১৫ এর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায়ও তিনি ছিলেন। এ লোক নিয়ে আসলে বলতে গেলে ব্যাঙ হয়ে যেতে হয়। বিএনপির কোন এক নেতা জানি বলছিল ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে’ মোহাম্মদ নাসিম ভালো থাকবেন ওপারে। ’
তবে পরবর্তীতে এ শিক্ষার্থী এ স্ট্যাটাস নিজ ওয়াল থেকে মুছে ফেলে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা, যাদের অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা আছেন।
একজন শিক্ষার্থী নিজের ব্যক্তিগত টাইমলাইনে পোস্ট দিয়েছেন একজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কেন মামলা করবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। দেশের এমন মহৎ ব্যক্তিকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় মামলা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীদের অনেকেই।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তানভির রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মামলা করতে পারে যদি কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে জানমালের ক্ষতি করে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থি কিছু করে থাকেন। মাহিরের ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো ক্ষতি হয়নি বা এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। তাহলে কোন ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো?’
এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। প্রথম শুনলাম। রেজিস্ট্রার বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। ’
এ বিষয়ে জানার জন্য প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ ও উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২০
এফএম/এফএম