রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায়ের স্থগিতাদেশ বহাল থাকছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
চলতি মাসে আপিল বিভাগে চলতি নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়ের করলে আদালত তা মঞ্জুর করে এ স্থগিতাদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড মধুমালতী চৌধুরী বড়ুয়া এ তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।
এর আগে, ওই বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে গত ২৯ জানুয়ারি নিয়োগ বাতিলের আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নিয়োগপ্রাপ্ত তিন শিক্ষক পৃথক সিভিল মিসলেনিয়াস পিটিশন (সিএমপি) দায়েরের পর আদালত চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি চার সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় নিয়োগ বাতিলের আদেশের দীর্ঘ সময় পর গত ২৩ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায় পাওয়ার পর আপিল বিভাগে নিয়মিত আপিল দায়ের করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড মধুমালতী চৌধুরী বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিবাদী পক্ষ আপিলের আবেদন করলে আদালত মঞ্জুর করেছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আগের স্থগিতাদেশ বহাল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের নভেম্বরে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্ল্যানিং কমিটি প্রভাষক পদে প্ল্যান্ট প্যাথলজি, জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং ও অ্যাগ্রোনমি /অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু পরে ওই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগ না করে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বিভাগগুলোর সঙ্গে ‘অ্যাগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি’ বিভাগ যুক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়াই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন প্ল্যানিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলী আসগর। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২১ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না? তা জানতে চাওয়া হয়।
আদালতে রিটের শুনানি চলাকালে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি উপাচার্যের বাসভবনে নিয়োগ সাক্ষাৎকার শেষে সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভায় তিন জনের নিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছিল।
তিন শিক্ষক হলেন- শামসুন্নাহার, মুখতার হোসেন ও রেজভী আহমেদ ভূঁইয়া। ২৭ জানুয়ারি তিন শিক্ষক যোগদান করেছেন। তবে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট তিন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অবৈধ ঘোষণা করেন এবং তাদের নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করেন।
এ রায় স্থগিত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তিন শিক্ষক পৃথক আবেদন করেন। যা ১০ ফেব্রুয়ারি চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও তিন শিক্ষকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন।
অন্যদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল। শুনানি নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্থগিতাদেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে আবেদনকারীদের নিয়মিত আপিল করতে বলা হয়েছে।
আপিলের আবেদন দায়েরের পর আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ফলে যোগদান করা তিন শিক্ষকের কাজ চালিয়ে যেতে আইনি কোনো বাধা নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
এসআরএস