ঢাবি : অনার্স সামাপনী পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন সজ্জাদ হোসেন। তিনি অনার্সে নৃবিজ্ঞান বিভাগ ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পান।
কেবল তাই নয়, মোট ৫২ জনের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রথম শ্রেণী পাওয়া ২৬ জনের মধ্যে ১৮ জনই মেয়ে। আর এই ব্যাচে মোট নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাই যেখানে ২২ জন।
এই চিত্রটি শনিবার প্রকাশিত নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের প্রকাশিত ফলাফলের। ফল প্রকাশিত হবার পর একের এক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রথম শ্রেণী পাওয়া কোনো কোনো শিক্ষার্থী নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
এই ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয় ৫ জুলাই। আর শেষ হয় ২৪ জুলাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৬ সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও ৬ মাস পর প্রকাশিত হয়।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন মোট ৫৩ জন শিক্ষার্থী, ১ শিক্ষার্থী ছাড়া সবাই কৃতকার্য হন। এর মধ্যে ২৬ জন শিক্ষার্থী পান প্রথম শ্রেণী।
নৃবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণী পাওয়ার রেকর্ডও এটি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে কোনো বিভাগে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রথম শ্র্র্রেণী প্রাপ্তির নজির খুবই কম। দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করেন ২৫ জন শিক্ষার্থী আর বাকি একজন তৃতীয় শ্রেণী লাভ করেন।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনার্সে যে সব শিক্ষার্থী নিচের সারির দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছিলেন, মাস্টার্সে তারা প্রথম সারির প্রথম শ্রেণী পেয়েছেন। যে শিক্ষার্থী অনার্সে শেষের দিকে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছিলেন, তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে এবারের ফলাফলে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। এমনিভাবে আরো অনেক শিক্ষার্থী অনার্সে নিচের সারির দ্বিতীয় শ্রেণীতে থাকলেও মাস্টার্সে প্রথম সারির প্রথম শ্রেণী পেয়ে সবাইকে চমকে দেন।
অনার্স ও মাস্টার্সের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনার্সে এই ব্যাচে মাত্র ৫ জন প্রথম শ্রেণী লাভ করেন। কিন্তু মাস্টার্সে তা বেড়ে হয় ২৬ জন। সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, অনার্সে প্রথম শ্রেণী পাওয়া ৫ শিক্ষার্থীর মাত্র ১ জন ছিলেন নারী শিক্ষার্থী। তবে মাস্টার্সে তাদের ঈর্ষণীয় সাফল্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ জনে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই ‘অদ্ভুত’ ফল প্রকাশের পর প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক শিক্ষার্থী। কেউ কেউ ভেঙে পড়েন কান্নায়।
অন্যদিকে, অপ্রত্যাশিতভাবে প্রথম শ্রেণী পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীই বিস্মিত হন। তারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, তারা প্রথম শ্রেণী পেয়েছেন। কেউ কেউ তাদের প্রথম শ্রেণী প্রাপ্তির সংবাদ তাদের অভিভাবকদের জানাবেন কিনা তা নিয়েই দ্বিধা করছিলেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের প্রথম শ্রেণী দেওয়ার প্রতিযোগিতা, শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোর্স শিক্ষকদের ‘বিশেষ’ সম্পর্কের কারণে ফলাফলের এই ভূতুরে রূপ।
এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ফলাফল সম্পর্কে কিছু জানি না। আপনি অধ্যাপক সাহেদ আহমদকে জিজ্ঞেস করুন।
ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কথা জানালে তিনি বলেন, ‘কারা তোমার কাছে অভিযোগ করেছে, একটু নামগুলো বলো। ’
এমনকি এই ফলাফল সঠিক কি-না এ বিষয়ে চেয়ারপারসন কিছু জানেন না বলেও জানান। ‘আপনি বিভাগের চেয়ারপারসন আপনার তো জানার কথা’ এ প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই জানিনা। ’
পরীক্ষা কমিটির অধ্যাপক ড. সাহেদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আপনি চেয়ারপারসনকে জিজ্ঞেস করুন। আমি কিছু জানিনা। ’
আরো কিছু অনিয়ম :
৬ সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও প্রকাশ করা হয় ৬ মাস পর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত বছর উত্তরপত্র মূল্যায়ন বিষয়ে একটি বিধিমালা করে। সে বিধিমালা অনুসারে উত্তরপত্র ৬ সপ্তাহের মধ্যে মূল্যায়ন করার কথা রয়েছে।
এছাড়া উত্তরপত্র বিলম্বে জমা দেওয়ায় এই ব্যাচের কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন খান আরেফিনকে পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় রিভিউ কমিটি নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন খান আরেফিনকে অব্যাহতি দেয়। অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন খান আরেফিন মাস্টার্স পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে বিলম্ব করেন। একই কারণে ওই বিভাগের শিক্ষক ও পরীক্ষা কমিটির সদস্য অধ্যাপক শাহেদ হাসানকে সতর্ক করে একই কমিটি। এরপর শনিবার তড়িঘড়ি করে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, তিন কোর্স শিক্ষক হলেন- ড. হেলাল উদ্দিন খান সামসুল আরেফিন, ড. জাহিদুল ইসলাম ও ড. শাহেদ হাসান।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১২