বরিশাল : ৬ বিভাগে ৪শ’ শিক্ষার্থী নিয়ে মঙ্গলবার থেকে যাত্রা শুরু করলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো-’ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, এমপি মঙ্গলবার জিলা স্কুলের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বরণ ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন।
শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন ও নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘বরিশাল বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষার দিক দিয়ে অনেকাংশে অগ্রসর। দেশের প্রথম সারির অনেক নেতা, অনেক গুণীজন, অনেক জনপ্রতিনিধি এই বরিশালেরই সন্তান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বরিশাল নতুনভাবে যাত্রা শুরু করলো। ’
মন্ত্রী বলেন, ‘খুব টানাটানির মধ্যে দিয়ে চলছে আমাদের সংসার (শিক্ষা মন্ত্রণালয়)। তারপরেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসের জন্য প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ একর জমি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় এটা অনেক বড়। ’
নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘১৫ শিক্ষক নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও আপনারা চিন্তিত হবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এরচেয়ে কম জনবল নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। আজ তারা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এখানে প্রাকৃতিক বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হবে। কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক অঞ্চল হিসেবে এখানে এগ্রিকালচার ও ফিশারি অনুষদ খোলা হবে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞানচর্চা, নতুন জ্ঞান আবিষ্কার ও গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু উপহার দেওয়া। এটাই হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আপনারা অমর হয়ে থাকবেন। ’
রাষ্ট্র ও জনগণের কাছে নাগরিকদের দায়বদ্ধতা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পেছনে রাষ্ট্রের ১ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এটা এদেশের জনগণের টাকা। আমাদের পেছনে একজন ভিক্ষুকেরও অবদান রয়েছে। আমরা দেশবাসীর কাছে দায়বদ্ধ। আমাদের তা মনে রাখতে হবে। ’
বরিশালবাসীকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান নয়। এটা জাতীয় সম্পদ। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বরিশালবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। ’
বর্তমান শিক্ষানীতি কোনো দলীয় শিক্ষানীতি নয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রচলিত শিক্ষা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা করা যাবে না। কারণ, প্রাথমিক স্তরেই শতকরা ৯ ভাগ স্কুলে যায় না। ৪৮ ভাগ ঝরে পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়েই। আর ৪২ ভাগ ঝরে পড়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে। এর জন্য চাই শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। চাই, একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত শিক্ষানীতি। ’
সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলেছিলেন, আমি পরীক্ষা বাড়াচ্ছি। কিন্তু, আমি পরীক্ষা বাড়াইনি। উল্টো কমিয়েছি। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিশু সার্টিফিকেট পেলে তার শিক্ষার প্রতি আরো আগ্রহী হবে। শিশুরা এখন উৎসাহের সঙ্গেই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীকে আধুনিক জ্ঞানে শিক্ষিত করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আধুনিক জ্ঞান বলতে আমরা বুঝি- নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ, দেশপ্রেম ও মানবতাবোধে উজ্জীবিত করা। ’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মো. হারুন-অর রশীদ খানের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন- অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শওকত আকবর, জেলা প্রশাসক এসএম আরিফ উর রহমান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মো. সিরাজউদ্দীন আহমেদ, প্রফেসর মো. হানিফ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. আখতারুজ্জামান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ ঘুরে দেখেন শিক্ষামন্ত্রী।
বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।
বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শোভাযাত্রার সূচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শোভাযাত্রায় বিশেষ অতিথি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নতুন ৪শ’ শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন।
শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিলা স্কুলের বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।
এরপর ওই ক্যাম্পাসেই শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। একইস্থানে বিকেল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রসঙ্গত, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচে ৪টি অনুষদে ৬টি বিভাগে মেধা অনুযায়ী ৪শ’ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও গণিত বিভাগে ৬৫ জন করে এবং মার্কেটিং ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৭০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৫ জন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য সদর উপজেলার কর্ণকাঠিতে ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় ব্যয়ে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে ২টি একাডেমি ভবন, ২টি প্রশাসনিক ভবন, ১টি ছাত্র হল ও ১টি ছাত্রী হলের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে বিকেলে নগরীর জাগদীশ সারস্বত স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজিত অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি।
বাংলাদেশ সময় : ১৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১২