রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৬ মে। এ দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ১১ (১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে ৩ সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত ওই ৩ জনের একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের জন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি একজনকে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ৪ আগস্ট সিনেটের প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে রাবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক এম সাইদুর রহমান খান। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে সরিয়ে ড. ফাইসুল ইসলাম ফারুকীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আর সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। সেই সময় থেকে শুরু হয় অনির্বাচিতদের উপাচার্য নিয়োগ, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
গত ৬ মে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হলেও এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি প্যানেল নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটও পূর্ণাঙ্গ নয়। এ অবস্থায় আবারও নির্বাচন ছাড়াই রাষ্ট্রপতিই পুনরায় নতুন নিয়োগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সদ্য সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে থেকেই নতুন উপাচার্য পদে কে আসছেন, এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সম্ভাব্য উপাচার্য হিসেবে বেশ কয়েক জনের নাম শোনা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাবির উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আছেন সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান, এখন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক ও প্রাণ রসায়ন ও অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক গ্রন্থাগার প্রশাসক সফিকুন্নবী সামাদী, ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল্লাহ এবং ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক রকিব আহমেদ।
অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান:
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহানের আগে (২০১৩-২০১৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এবং ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি দায়িত্ব পালনের সময় শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন প্রায় ৩৪ বছর ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গত বছর পর্যন্ত ৫০ জন বিজ্ঞানীর তালিকা করা হয়, সেখানে তার নাম উঠে এসেছে ৪৩ নম্বরে।
অধ্যাপক শফিকুন্নবী সামাদী:
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শফিকুন্নবী সামাদী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসক ছিলেন। সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাকে আন্দোলনে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচনে জয় লাভ করে তিনি কনভেনিং কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে, তিনি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালীন বিশ্বব্যাংক ‘হেকেপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি বরাদ্দ আসেন। তার বিরুদ্ধে এই প্রকল্পের অর্থের ব্যয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান:
প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে জাপানের ওকাইমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিকুলার বায়োলজির ওপর পিএইচডি করেন।
অধ্যাপক রকীব আহমেদ:
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের এই অধ্যাপক এখন অবসর পরবর্তী ছুটিতে (পিআরএল) রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অবসরে যাবেন আগামী ৩০ জুন। এই অধ্যাপক সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান ঘনিষ্ঠ বলেই ক্যাম্পাসে পরিচিত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়ার জন্য বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন অধ্যাপক রকীব আহমেদ। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক ছিলেন।
অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ:
ইংরেজি বিভাগের এই অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি বিদায়ী উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের ঘনিষ্ঠ। উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের সময় তিনি ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজেজের পরিচালকের দায়িত্বে পান। এখনও সেই দায়িত্বে রয়েছেন। আব্দুস সোবহানের আগের মেয়াদে তিনি ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (আইবিএস) পরিচালক ছিলেন।
জানতে চাইলে সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমত একজন উপাচার্যকে অবশ্যই ভালো শিক্ষক হতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং ছাত্রবান্ধব হতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় অভিজ্ঞ হতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উপাচার্যের দায়িত্ব।
প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, উপাচার্য হিসেবে একজন ব্যক্তির যেসব যোগ্যতা বা গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তার চিন্তা-ভাবনা ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে প্রকাশ করেছেন।
একজন উপাচার্যের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সততা, সাহসিকতা ও নৈতিকভাবে উচ্চমানের হওয়া উচিত। সর্বোপরি, একজন সুন্দর মনের মানুষ হতে হবে। যাতে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়।
বাংলাদেশ সময়:১০৫০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২১
এএটি