ঢাকা: আগামী ৭ অক্টোবর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) নেওয়া হবে সেমিস্টার পরীক্ষা। এই সিদ্ধান্তের পর ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জবির এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী থাকেন। সেমিস্টার পরীক্ষার সিদ্ধান্তের পর বর্তমানে একসঙ্গে অনেকে মেস ও বাসার খোঁজ করছেন। অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে থেকে আবাসন নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিচ্ছেন তারা। এছাড়াও আত্মীয়-স্বজন এবং সহপাঠীদের মাধ্যমে চলছে বাসার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা। তবে আবাসনের অপ্রতুলতা, অতিরিক্ত বাসা ভাড়াসহ বেশ কিছু জটিলতার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত জুনের শেষ দিকে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই সময় গ্রামে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ঢাকায় মেস ঠিক করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা না হওয়ায় মেস ছেড়ে আবারও বাড়িতে চলে যান তারা। এরপর আগস্টের ১০ তারিখ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও করোনা সংক্রমণ বাড়ায় তা স্থগিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ক্যাম্পাস খুলবে এই আশায় বাড়িতে থেকেও অনেকে নিয়মিত মেসের ভাড়া পরিশোধ করেছেন।
এদিকে আবাসন সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন ছাত্রীরা। তাদের দাবি, ছাত্রী হলে থেকে পরীক্ষা দিতে পারলে আবাসনের জন্য মানসিক চাপ থাকতো না। পরীক্ষার আগে মেস নিশ্চিত করে ঢাকায় যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য।
জবির প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী চন্দ্রিমা রায় বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ দিন ধরে মেস খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না। পরীক্ষা হবে ভেবে আগের মেস অনেক দিন ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। এখন যেহেতু পরীক্ষার তারিখ দিয়েছে, তাই সবাই মেস খুঁজছি। ঢাকা থেকে অনেক দূরে বাড়ি হওয়ায় তাৎক্ষণিক মেস পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ এদিকে আমরা মিডটার্ম দিচ্ছি আবার ফাইনাল পরীক্ষার টেনশন। সব মিলিয়ে আবাসনের বিষয়টি অনেক ভোগাচ্ছে আমাদের।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অঙ্কুর মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আগেও কয়েকবার পরীক্ষার তারিখ দিয়েছিল। তখন আমরা বাসা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় গুণতে হয়েছে বাড়তি মেস বাড়া। এখন পরীক্ষা চূড়ান্ত। তাই সবাই মেস খুঁজছে। ফলে মেস পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও ভাড়া বেশি চাইছে। অনলাইন ও সশরীরে মেস খোঁজা যে কতটুকু ঝামেলা তা বলে বোঝানো যাবে না।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সুরভী বাংলানিউজকে বলেন, আসলে সবাই একসঙ্গে বাসা ছেড়েছে। তাই এই ভোগান্তি হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে আমি বাসা খুঁজছি, পাচ্ছি না। পেলে এখনই ঢাকায় চলে যেতাম। বাড়িতে থেকে পরীক্ষার প্রিপারেশন নেওয়া অনেক কষ্টকর। বাসা না পেলে আত্মীয়ের বাসায় থাকতে হবে। ছাত্রী হলে পরীক্ষার উঠানো হলে সার্বিকভাবে ভালো হতো।
জবির ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মেস বা বাসা ভাড়া করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নয়। তারপরও কোনো শিক্ষার্থী সুস্পষ্টভাবে তার সমস্যাটি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সাহায্য চাইলে সেটির আবেদন ছাত্রকল্যাণ দপ্তরে দিতে পারে। তখন আমরা এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিব। এক্ষেত্রে ছাত্রকল্যাণ শুধু মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।
জবির বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষক ড. প্রতিভা রাণী কর্মকার বলেন, দ্রুতই ছাত্রীদের হলে উঠানো হবে। আমাদের ছাত্রীদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে এটা ঠিক। করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে ছাত্রী হলটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। অর্ডিনেন্স অনুসারে ছাত্রীরা সিট পাবে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে আবারও মুখরিত হয়েছে শিক্ষা অঙ্গন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১
এনএসআর