রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধা সহজ করার যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, কমপক্ষে ৭০ ভাগ ভর্তি ইচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আবাসন, খাবার, যাতায়াত ও নিরাপত্তার সুষ্ঠু ব্যবস্থপনা করতে চায় প্রশাসন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহীর বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভায় রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আবাসন, খাবার, যাতায়াত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রথমবারের মতো রাবির হলসমূহ বন্ধ থাকা অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে আমাদের অনেক কিছুই মেনে চলতে হচ্ছে।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ থাকায় আবাসন সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের রাখার জন্য মহানগরীর বিভিন্ন ছাত্রবাস, আবাসিক হোটেল, বিভিন্ন সরকারি রেস্ট হাউজ, গেস্ট হাউজ ইত্যাদি এবং এরপরও যদি প্রয়োজন হয়, তবে বিকল্প কিছু ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। এসবে অন্তত ৭০ শতাংশ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। বাকিরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাসাবাড়িতে থাকবেন।
কিনি বলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যাতায়াতের জন্য বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রাবির বাসগুলো শহরে চলাচল করবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সুবিধার জন্য রাজশাহী অভিমুখী সব ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে থামানোর জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের খাবারের জন্য স্বনামধন্য হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে খাবারের কোন সঙ্কট না হয় এবং চাহিদামতো সবাই খাবার কিনে খেতে পারেন।
রাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে এবার হল বন্ধ রেখেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সিটি মেয়রের আমন্ত্রণে আমরা আজ বসেছি। রাবিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার। আগামী ৪ থেকে ৬ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন গড়ে ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। এছাড়া ১,২,২৩ ও ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বর্তমানে মূল সমস্যা আবাসনের। প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যে কোন প্রয়োজনে আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকব। বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে ছাত্রদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আরএমপির ট্রাফিক বিভাগ যানবাহন চলাচলে নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আবাসিক হোটেলে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, বিভিন্ন ছাত্রাবাসে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। ছাত্রাবাসে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ ফ্রি রাখা হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আব্দুল জলিল বলেন, রাজশাহীতে ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। সরকারি রেস্ট ও গেস্ট হাউজে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়া সভায় নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এই প্রস্তুতিমূলক সভায়।
সভায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন রাবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান উল ইসলাম, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম শরীফ উদ্দিন।
এছাড়া সভায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব মো. মশিউর রহমান, রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান টিটোসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময় : ২২০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
এসএস/এমএমজেড