জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): পুরান ঢাকার ধূপখোলায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের জন্য রাতের আঁধারে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত থেকে এ খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরশনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অনাবাসিক বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মাঠের বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি প্রথমে সিটি করপোরেশন থেকে মাঠে মার্কেট নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন সে কথা রাখেনি তারা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাঠ রক্ষার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হবে। এতেও সমাধান না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের দুই পাশের গোলপোস্ট ও দুইপাশের সীমানাপ্রাচীরগুলো তুলে ফেলা হয়েছে। মাঠটি তিনটি অংশে বিভক্ত। যার অর্ধেক অংশ ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে এবং বাকি অংশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে। মাঠের দুই পাশের গেইট আটকানো৷ ভেতরে মাটি খুঁড়ে সেই মাটি ফেলে এক পাশের গেইট আটকে দেওয়া হয়েছে। মাটি খুঁড়ে তৈরী করা হয়েছে বিশাল গর্ত। গর্তের পাশেই ফেলে রাখা হয়েছে মাটি।
এরআগে গত জুনে মার্কেট নির্মাণের জন্য মাঠে খুঁটি বসানো হলে প্রথমে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেয় এবং পরবর্তীতে সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখন খেলার মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হয়। এবং খেলার মাঠ থেকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষাকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক গৌতম কুমার বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৭ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের আশঙ্কায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হয়। সে সময় খেলার মাঠ থেকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু গভীর রাতে আবার পুরো মাঠ ঘিরে রাখা হয়। মাঠের গোলপোস্ট ও সীমানাপ্রাচীরগুলো নিয়ে গেছে তারা।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ধূপখোলায় তিনটির পরিবর্তে একটি মাঠ নির্মাণ করতে চাইছে। এতে কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে যাবে এবং আমাদের খেলাধুলা বাধাগ্রস্ত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য নিজস্ব কোনো মাঠ না থাকায় ধূপখোলা খেলার মাঠটি তিন ভাগ করে এক ভাগ তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজকে ব্যবহার করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেন। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি খেলার মাঠ হিসেবে ধূপখোলা মাঠটিকে ব্যবহার করছে। এ মাঠেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাফসান জামিল রাজু বাংলানিউজকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ধুপখোলা মাঠের রয়েছে হাজারো স্মৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত এ মাঠ আজ সিটি করপোরেশনের দখলে। যদিও প্রথমে বলা হয়েছিল আলোচনা সাপেক্ষে খেলতে পারবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত হলেও এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি৷ এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের দাবি দ্রুতই বিষয়টি সমাধান করার জন্য।
তবে এ বিষয়ে স্থাপনা নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ধূপখোলা খেলার মাঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আমি আগেও দাবি জানিয়েছি। এখনো দাবি জানাচ্ছি।
রাতের আধারে কাজ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন যে কর্মকান্ড শুরু করেছে তা কখনোই জনগণবান্ধব কাজ নয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের অংশ বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ততকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তখন সে আমাদের বলেছে এ মাঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। এটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরই থাকবে। কিন্তু এ সময়ে এসে মাঠ দখল হয়ে যাওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ব্যর্থতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এতদিন থেকে ব্যবহৃত একটা সম্পদ সিটি কর্পোরেশন নিয়ে যাচ্ছে এটা দুঃখজনক। আমরা এর নিন্দা জানাই। এবং খেলার মাঠ রক্ষার্থে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব আমরা করবো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ এ যারা দায়িত্বে আছে তাদের আরো সচেতন হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পূর্বেও মাঠটি রক্ষার চেষ্টা করেছি৷ মাঠের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি পাঠানো হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মাঠ দখলে রাখার। সিটি করপোরেশনের মেয়র আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলো কিন্তু এখন তিনি কথা রাখছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠাচ্ছি৷ যদি বিষয়টি সমাধান না হয় তাহলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১
এনএইচআর