রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক হলের একটি রুমের দরজার কড়া ভেঙে সিটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ওই কক্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র সরিয়ে অন্য আরেকজনকে সিটের দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।
হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সিট বিশিষ্ট ২৩৫ নম্বর রুমে পপুলেশন সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুলতান মাহমুদ বিদুৎ ও এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. সরওয়ার থাকেন।
১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল খুলে দেওয়ার পরে এখন পর্যন্ত হলে উঠেননি তারা। হলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. আহসান উল্লাহর ৫-৬ জন অনুসারী গিয়ে দরজার তালা ঝুলানোর কড়া কেটে রুমে প্রবেশ করে সুলতান মাহমুদের সিটে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে আকিব আব্দুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীকে সিটের দখল বুঝিয়ে দেন।
সরেজমিনে দেখা, হলের দ্বিতীয় ব্লকের দোতলার ২৩৫ নম্বর রুমের দরজার কড়া কেটে দেওয়া হয়েছে। এসময় দরজায় ৪টি তালা ঝুলানো দেখা যায়। সিট দখলের হল প্রশাসন একটি তালা লাগিয়ে দেয়।
২৩৫ নম্বর রুমের আশেপাশের অন্তত ৭-৮ জন শিক্ষার্থী জানান, আকিবের সঙ্গে আলাপকালে তিনি সিটের দখল বুঝিয়ে দিতে হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে তাদের জানিয়েছেন।
তবে, আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা আহসান উল্লাহ বলেন, আকিব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সুপারিশ নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমি তাকে বলেছি, রুমটি ফাঁকা আছে তুমি ওই রুমে উঠো। রুমটির যারা আবাসিক শিক্ষার্থী তাদের মাস্টার্স শেষ হয়ে গেছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাকে না জানিয়েই ছেলেটি হলে ঢুকেছে। কাজটা আসলে ঠিক হয়নি।
তবে, আকিব আব্দুল্লাহর নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
২৩৫ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী সুলতান মাহমুদ বিদ্যুৎ বলেন, পারিবারিক কাজে হল থেকে কিছুদিন আগে বাড়িতে এসেছি। আজ সন্ধ্যায় আমার রুমমেট জানায় আমার কক্ষে কে বা কারা প্রবেশ করেছে। বিষয়টি আমি হল প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিষয়টি আমি এখনও জানি না। আমি খোঁজ নিচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, হলের রুম কারা দখল করছে বা কারা হলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে, এই বিষয় দেখার দায়িত্ব হল প্রাধ্যক্ষ ও হলের কর্মকর্তাদের। যদি হল প্রাধ্যক্ষরা সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।
জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সুজন সেন বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে হলের সুপারভাইজারকে পাঠিয়ে ওই রুমে তালা দিয়েছি। পরে হলে এসে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের তথ্য নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর ১৭ অক্টোবর আবাসিক হল খুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই দীর্ঘ সময়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে অসংখ্য শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন। এতে প্রতিটি আবাসিক হলে অন্তত ৭০টি করে সিট ফাঁকা হয়েছে। ফাঁকা সিটগুলো দখলে নিতে বিভিন্ন রুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের নাম, কবে মাস্টার্স শেষ হবে এবং কবে হল ছাড়বেন, সেই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন হলের ছাত্রলীগের নেতারা। এতে সিট বণ্টন নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে হল প্রশাসনের।
শুধু তাই নয়, কয়েকটি হলে প্রাধ্যক্ষদের অনুমতি নিয়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে সেই সিট দখলে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে ছাত্রলীদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। দখলকৃত সিটগুলোতে টাকার বিনিময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলছেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তবে এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনকে কোনো কার্যকরী ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২১
এএটি