ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন তৃতীয় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় আহত সমাজকল্যাণ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
এ সময় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিবৃত করতে গেলে তাদের বাঁশের আঘাত লাগে ইবি ছাত্রলীগ নেতা ও মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হোসাইন মজুমদারের।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হল সংলগ্ন ক্রিকেট মাঠে এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিবে ছাত্রলীগ নেতারা বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সমাজকল্যাণ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ও লালন শাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফ, একই বিভাগের প্রথম বর্ষের মারুফ ও তার বন্ধু প্রিন্সকে নিয়ে জিয়া মোড়ে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় আরিফ গল্পচ্ছলে তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন।
গল্প করার এক এক পর্যায়ে মারুফ অন্যমনস্ক হলে আরিফ তার গালে-মুখে হাত দিয়ে নিজের (আরিফ) দিকে দৃষ্টি দিতে বলেন। এতে মারুফ আরিফের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এমনকি তাকে মারতেও উদ্যত হয়। এ সময় প্রিন্স মারুফকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ওইদিনই রাত ১১টার দিকে মারুফ ও প্রিন্স লালন শাহ হলে আরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষমা চান। পরবর্তীতে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে জিয়া মোড়ে আরিফ ও তার বন্ধুরা মারুফকে ডাকেন। এ সময় আরিফের বন্ধু আবদুল্লাহ, আবু তালেব, হানিফসহ ৭/৮ জন উপস্থিত ছিলেন। মারুফ আসলে আরিফ ও তার বন্ধুরা তার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে মারুফ উত্তোজিত হয়ে পড়লে আরিফের বন্ধু ও আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হানিফ তাকে চড় মারেন।
এরপর মারুফ তার বন্ধুদের ডাকেন। পাশাপাশি মারুফের সিনিয়র ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিমুল, ২০১৮-১৯ শিক্ষবর্ষের মাসুদকে ডাকেন। সেখানে মারুফ ও তার বন্ধু রিয়ন, ধ্রুব, প্রিন্স, ফয়সাল, শিমুল-মাসুদ (সিনিয়র)-সহ ৩০ জন উপস্থিত হন। এ সময় ধ্রুব, মাসুদসহ কয়েকজন জুনিয়র আরিফ ও তার বন্ধুদের এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। তখন ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন মজুমদার জুনিয়রদের নিবৃত করতে গেলে অভিযুক্তদের বাঁশের আঘাতে হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
পরে ছাত্রলীগ নেতা বিপুল হোসেন খান, হোসাইন মজুমদারসহ সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতারা উভয় পক্ষকে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন জোয়ার্দার, ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত, বিপুল খান, হোসাইন মজুমদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী আরিফ হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমরা একসঙ্গে বসে গল্প করছিলাম। মারুফ অন্যমনস্ক হলে আমি তার গালে-মুখে হাত দিয়ে আমার দিকে দৃষ্টি দিতে বলি। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হয়। শুক্রবার সকালে আমার বন্ধুরা মারুফকে বোঝানোর জন্য ডাকে। পরে মারুফ তার বন্ধু ও সিনিয়রদের ডেকে আমাদের এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। ’
মারুফ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আরিফ ভাই আমাকে থাপ্পড় মারে। তাৎক্ষণিক ক্ষিপ্ত হলেও পরে রাত ১১টার দিকে ভাইয়ের হলে গিয়ে ক্ষমা চাই। শুক্রবার সকালে ভাই আবার কল দিয়ে আমাকে ডাকে। এ সময় তাদের একজন আমাকে থাপ্পড় মারে। পরে আমার বন্ধুরা কয়েকজন সিনিয়রকে জানায়। তারপর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কে কাকে মেরেছে আমি খেয়াল করিনি। আমি মাঠে অন্য পাশে বসে ছিলাম। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘটনা শুনিনি। কাল ক্যাম্পাসে এসে খোঁজখবর নেব। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২১
এমএমজেড